Originally posted in The Business Standard on 29 April 2024
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, দেশে বড় বৈষম্য তৈরি হলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কারণ বৈষম্যের ফলে ক্রেতা গোষ্ঠী তৈরি হয় না। তাই বৈষম্য কমাতে পারলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে এবং টেকসই হবে।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) পঁয়ত্রিশ বছর উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপির হার দক্ষিণ এশিয়া তথা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। ‘করখেলাপি, ঋণখেলাপি ও পাচারকারীরাই আমাদের বৈষম্যের মূল কারণ। এই বৈষম্য আমাদের অবশ্যই কমাতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সিপিডির ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও দেশে বিদ্যমান বৈষম্য নিয়ে কথা বলেন।
মোস্তাফিজুর রহমান তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘রুপকল্প ২০৪১-এর অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ হলো বৈষম্যমুক্ত সমাজ। একটা দেশ যখন অগ্রসর হয়, তখন বৈষম্য কিছুটা বাড়ে এবং পরে সেটা কমে—এরকম একটা তত্ত্ব অর্থনীতিতে আছে। তবে গবেষকদের দাবি, যে রাষ্ট্র কম বৈষম্য নিয়ে অগ্রসর হয়, তাদের প্রবৃদ্ধি দ্রুত হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে মানসম্মত দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে। এই সমস্যার সমাধান হলো আমাদের বৈষম্য কমাতে হবে। এজন্য যে জায়গায় বৈষম্যের জন্ম হচ্ছে সে জায়গায় হাত দিতে হবে। এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার।’
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য তার বক্তব্যে বলেন ‘বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হলে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই, তাহলে তাদের সামাজিক ও মানবিক শক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কোনো ধরনের বৈষম্য রাখা চলবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে আগানোর জন্য যদি বাজারভিত্তিক অর্থনীতির ভেতর যেতে হয়, তবে জানতে হবে বাজার সবাইকে সমানভাবে দেখে না। এমনকি রাষ্ট্রও সবাইকে সমানভাবে দেখে না। তাই কারও প্রবৃদ্ধি হয়, কারও হয় না। এই বৈষম্য কমাতে হলে সবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ না করে সুনির্দিষ্টভাবে অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য কিছু করতে হবে। এজন্য বড় কাজ করতে হলে অংশীদারত্ব লাগে, সমমনাদের সংঘবদ্ধ হতে হয়।’
আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড অনেক বিস্তৃত। তারা স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। হতদরিদ্র মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে। এখানে শ্রমজীবী নারীদের বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তারাই দেশের অগ্রযাত্রায় শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছেন।’
আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক (নিবন্ধন ও নিরীক্ষা) মো. আনোয়ার হোসেন, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের পরিচালক হাসিন জাহান, এবং ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।
একই দিন দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশন ‘কেমন বাংলাদেশ চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি ও পাটবিজ্ঞানী অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ।