Originally posted in কালের কন্ঠ on 18 February 2022
বাংলাদেশে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে এক ধরনের ঊর্ধ্বমুখী মূল্য প্রবণতা কয়েক মাস ধরে দেখতে পাচ্ছি। সরকারের মূল্যস্ফীতির তথ্যই বলছে ৬ শতাংশের ওপরে উঠে গেছে এই প্রবৃদ্ধির সূচক। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় পণ্যেই এক ধরনের ঊর্ধ্বমুখীপ্রবণতা। তবে মূল্যস্ফীতিসংক্রান্ত সরকারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ভোক্তা পর্যায়ে বড় ধরনের ফারাক রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির সরকারি তথ্যের চেয়ে বাজারে মূল্য বেশি।
এ বিষয়ক একটি গবেষণায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) দেখেছে যে সাম্প্রতিককালে মূল্যবৃদ্ধির যে প্রবণতা, সেটির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক কারণ যেমন রয়েছে, তেমনি আছে অভ্যন্তরীণ কারণও। একই সঙ্গে ক্যাবের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, কিছু পণ্যের মূল্যের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পারিবারিক ব্যয়ের প্রবণতা অনেক বেশি। কেননা সেসব পণ্য তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবহৃত হয়। আর সে কারণে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় অনেক বেড়ে যায় বলে ক্যাবের রিপোর্টে উল্লেখ হয়েছে।
সাধারণত মূল্যস্ফীতির এই বিষয়টিকে সিপিডির রিপোর্টে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একটি হলো বাজারসংক্রান্ত মূল্যবৃদ্ধির ব্যাখ্যা। আরেকটি হলো বাজারবহির্ভূত মূল্যবৃদ্ধির ব্যাখ্যা। বাজারসংক্রান্ত মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে কভিড থেকে পুনরুদ্ধার পর্যায়ে সব মানুষ নতুন করে আবার কাজে ফিরতে শুরু করেছে। মানুষের আয় বাড়ছে। হঠাৎ করে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি বৈশ্বিক পর্যায়ে যেমন সত্য, তেমনি বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে কমবেশি সত্য। হয়তো সব পর্যায়ে সমানভাবে আয় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু অবশ্যই আয়ের ক্ষেত্রে বৃদ্ধির একটি প্রবণতা সাম্প্রতিককালে রয়েছে।
বাংলাদেশে অর্থনীতির এক ধরনের পুনরুদ্ধার হয়েছে। দ্বিতীয়বার কভিড সংক্রমণ বা ওমিক্রনও সেই অর্থে খুব বড় রকমের চাপে ফেলেনি। তবে বৈশ্বিক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে হঠাৎ করে পণ্যের চাহিদা তৈরি হওয়ায় কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহকারী দেশগুলোও পণ্য সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে এবং তাদের পর্যায়েও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও রপ্তানি মূল্যবৃদ্ধির সাপেক্ষে সামগ্রিকভাবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রবণতা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। ফলে বাংলাদেশের যেসব আমদানি করা পণ্য, সেখানেও আমরা বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার অভিঘাত দেখতে পাচ্ছি। সেটি তেল, চিনি, ডাল ও অন্যান্য আমদানি পণ্যের জন্য কমবেশি প্রযোজ্য।
বাংলাদেশের ভেতরেও কিন্তু মানুষ কাজে ফিরছে। সুতরাং তারও এক ধরনের ব্যয়প্রবণতা বেড়েছে এবং সে কারণে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উৎপাদিত যেসব পণ্য রয়েছে, সেটি চাল থেকে শুরু করে পেঁয়াজ ও অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্য—সব কটির ক্ষেত্রে কথাটি অংশত সত্য। ফলে সেখানেও সরবরাহের একটা ঘাটতি রয়েছে, হঠাৎ করে চাহিদা বৃদ্ধির একটা প্রবণতা রয়েছে। একই সঙ্গে এ কথাও সত্য, বিগত বছরগুলোতে কভিডের কারণে যে মুনাফা হারানো দেশি পণ্য বা কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী দেশ ও উদ্যোক্তারা এ সময়ে বাড়তি মূল্য নিয়ে বিগত দিনের লোকসান পুষিয়ে নিতে চাইছেন। ফলে সে কারণেও তাঁদের ভেতরে এক ধরনের বর্ধিত মূল্য চাওয়ার পাশাপাশি পচনশীল নয় এমন পণ্য ধরে রাখা এবং সেখান থেকে কিছু বাড়তি মুনাফা করার প্রবণতা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশেও আমরা বাজারবহির্ভূত যে কারণগুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার মধ্যে যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলো হচ্ছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পণ্য ধরে রাখা, মজুদ করে রাখা। যাঁরা বড় সরবরাহকারী, তাঁরা এগুলো ধরে রাখছেন অথবা বৃহৎ আমদানিকারকরা সুবিধাটি নিচ্ছেন।
আবার আমরা দেখি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ বিশেষ পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও সেই পণ্য নির্ধারিত মূল্যে পাওয়া যায় না। কোনো পণ্য নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি না হয়ে বাজারে বাড়তি মূল্যে বিক্রি হলে, তা বাজারবহির্ভূত কারণে ঘটছে বলে মনে হয়। সাম্প্রতিককালে আমরা দেখেছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামে বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। একজন ভোক্তাকে বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে।
সিপিডির গবেষণায়ও আমরা দেখেছি, সাম্প্রতিককালে মূল্য এবং মার্জিনের ক্ষেত্রে সব পর্যায়ে সমপরিমাণের মার্জিন রাখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সাধারণত যাঁরা পণ্যের বৃহৎ সরবরাহকারী, তাঁরা কম মার্জিন নিয়ে থাকেন। কেননা কম মার্জিনের ওপর বড় পরিমাণের সরবরাহ দিয়ে তাঁরা ব্যয় মিটিয়ে থাকেন। মুনাফা করে থাকেন। অন্যদিকে যাঁরা অল্প পরিমাণে বাজারে সরবরাহ করেন, তাঁরা একটু বেশি মার্জিন রাখেন। কেননা কম পরিমাণ সাপ্লাই দিয়ে তাঁদের ব্যয় মিটিয়ে পরিবারের জন্য আয় নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু আমাদের গবেষণায় চাল কিংবা তেলের ক্ষেত্রে বা উভয় ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, খুচরা পর্যায়ের মূল্য মার্জিন এবং ফান্ডেড মার্জিন ও ইমপোর্ট মার্জিন প্রায় কাছাকাছি পর্যায়ে ওঠানামা করেছে। তার মানে একজন আমদানিকারকও একজন তুচ্ছ বিক্রেতার মতো সমান পরিমাণে মার্জিন রাখছেন। সেই জায়গাটি নিয়েই আসলে আপত্তি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে হিসাব করছে। মার্জিন ও পরিবহন ব্যয়ের হিসাব নিচ্ছে। অন্যান্য ব্যয় ধরে তারা পণ্যের মূল্য ঠিক করে দিচ্ছে। কিন্তু সেটি যখন বাজারে বাস্তবায়িত হচ্ছে না, সেখান থেকে প্রশ্নটি আসে যে বাজারে কি আড়াল থেকে এক ধরনের অলিখিত নিয়ন্ত্রণ চলছে? তাহলে অলিখিত নিয়ন্ত্রণের নেপথ্যে কারা? বড় আমদানিকারক ব্যবসায়ী এবং অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে যাঁরা বড় আকারের সাপ্লাইয়ার, তাঁরা?
এ অবস্থায় বলা যেতে পারে, শুধু সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণই যথেষ্ট নয়, বরং আমদানি পর্যায়ে এগুলোর মূল্য কী ছিল, কী মূল্যে বাজারজাত হচ্ছে, আমদানিকারক কী পরিমাণ মজুদ রাখছেন, আমদানিকারক কী মূল্যে এগুলো আড়তদার বা পাইকারি পর্যায়ে ছাড়ছেন, সেগুলো কিন্তু দেখার দরকার রয়েছে। ঠিক একইভাবে অভ্যন্তরীণ পণ্যের ক্ষেত্রেও মাঠ পর্যায়ের কৃষক, বড় কৃষক, রাইস মিলার ও অটো রাইস মিলার কী পরিমাণ মজুদ রাখছেন, কী মূল্যে বাজারজাত করছেন এবং কী মূল্যে তাঁরা কিনেছেন তার হিসাব রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
একই সঙ্গে এটিও ঠিক যে সরকার সাম্প্রতিককালে ব্যাপকভাবে ওএমএস কর্মসূচি বৃদ্ধি করেছে, যেটি আসলে যৌক্তিক। কেননা মূল্যস্ফীতির মধ্যে সাধারণ মানুষ, নিম্ন আয়ের মানুষের বর্ধিত মূল্যে সক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে কিছুটা নির্ধারিত মূল্যে সরকার থেকে পণ্য কেনার আগ্রহ বাড়ছে। সরকার যৌক্তিক কারণে ওএমএস কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। ফলে প্রচুর পরিমাণে পাবলিক স্টকের দরকার পড়ছে। পাবলিক স্টকগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে রাইস মিলার ও কৃষকদের কাছ থেকে। অথবা আমদানিকারকদের কাছ থেকে। ফলে যেটি হয়েছে যে বাজারের জন্য স্বাভাবিক সরবরাহের সঙ্গে এই ওএমএস পর্যায়ের সরবরাহের ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে তার একটি মূল্যবৃদ্ধির কারণ হচ্ছে বলে অনুমান করা যায়, যদিও সরকারের স্টকে যথেষ্ট পরিমাণ মজুদ রয়েছে। আমরা জানি, ১৬ থেকে ১৮ টন চাল গম মজুদ রয়েছে। সেই মজুদেও আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাজারে মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। সেই জায়গাটি কিন্তু এখানে দেখার দরকার রয়েছে। আমরা যেটি মনে করি, এসব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বাইরে যে ঘটনাগুলো হচ্ছে, সেই বাজারবহির্ভূত মূল্যের কারণগুলো দেখার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই এবং এ ক্ষেত্রে সরকারের কম্পিটিশন কমিশন যেটি রয়েছে, তাদের আরো সক্রিয় হওয়া দরকার।
আমরা জানি, একটি প্রতিযোগিতা কমিশন রয়েছে, যাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে কি না তা দেখা। কিন্তু আমরা দেখতে পাই যে বড় সাপ্লাইয়ারদের কাছে আমাদের সরকার অথবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক ধরনের অসহায় বোধ করে। ফলে অনেক সময় অনেকটা হাত বুলিয়ে মার্কেট সাপ্লাই ঠিক রাখার একটা প্রবণতা তাদের মধ্যে দেখা যায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে অত্যাবশ্যকীয় গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে কম্পিটিশন কমিশন জোরালো ভূমিকা রেখে থাকে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কম্পিটিশন কমিশনের কোনো ভূমিকা আমরা দেখছি না। অথচ এটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার। আমরা তাদের কাছে সঠিক ভূমিকা প্রত্যাশা করি।
সমস্যটি হচ্ছে, এই মূল্যবৃদ্ধির স্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে সাধারণ মানুষের জন্য নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, অন্যান্য জ্বালানিজাতীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বা ইউটিলিটির মূল্যবৃদ্ধির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত। আমাদের কাছে এটি এই মুহূর্তের জন্য মোটেই কোনো গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নয় বলে আমরা মনে করি। আমরা শুনতে পাচ্ছি যে ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির একটি আলোচনা চলছে। কিন্তু আমি বিগত ১০ বছরে ওয়াসার হিসাব দেখতে পাচ্ছি, ওয়াসা নিয়মিতভাবে মুনাফা করে আসছে। ওয়াসাকে ভর্তুকি দিতে হয়নি। ওয়াসা গত ১০ বছরে প্রায় এক হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এখন বলা হচ্ছে, ওয়াসা তার খরচ মেটাতে পারছে না। তার জন্য তার বর্ধিত মূল্য দরকার। আমরা মনে করি, এই যুক্তিটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই মুহূর্তে পানির মূল্যবৃদ্ধির কোনো প্রায়োজন আছে বলে মনে করি না। যদি ওয়াসার আসলে বর্ধিত মূল্যের কোনো যৌক্তিক কারণ থাকে, তাহলে বর্ধিত ব্যয়টুকু ওয়াসার বিগত বছরে যে মুনাফা হয়েছে, সেখান থেকে পূরণ করতে পারে। গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করাও উচিত হবে না। মনে রাখা দরকার, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যে জ্বালানি ব্যবহৃত হয়, সেই এলএনজির অংশ খুবই অল্প। সুতরাং অল্প পরিমাণ এলএনজির মূল্যবৃদ্ধির দায়টুকু পুরো বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মধ্যে সম্পৃক্ত করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড় মূল্যবৃদ্ধির এক ধরনের চেষ্টা চলছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও বিইআরসি এই বিষয়গুলোকে যৌক্তিকভাবে বিবেচনা করবে এবং বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির জায়গা থেকে সরকার সরে আসবে। যদি কোনো কারণে এলএনজির মূল্যের কারণে বাড়তি ভর্তুকির প্রয়োজন হয়, আশা করি সরকার সীমিত সময়ের জন্য আরো কিছুকাল ভর্তুকি অব্যাহত রাখবে। একই সঙ্গে গ্যাসের মূল্যের ক্ষেত্রে এই কথাটি সত্য বলে আমরা মনে করি। আমরা শুনতে পাচ্ছি, বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যয় অ্যাডজাস্ট করতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া দরকার যে এই বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির যে অগ্রগতি, সেখানে তুলনামূলকভাবে ছোট অগ্রগতি হয়েছে। সেখানে এক ধরনের অব্যবহৃত রেভিনিউ থেকে যাচ্ছে। আমাদের কাছে মনে হয়, বর্ধিত ব্যয় মেটানোর জন্য সেটি কাজে লাগাতে পারে অর্থ মন্ত্রণালয়। সরকার কিন্তু সরকারি ব্যবস্থাপনা থেকে ঋণ নেওয়ার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে সরকার ঋণও নিতে পারে। সরকার এরই মধ্যে ইইউ, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ওআইসি থেকে যে বাজেটারি সাপোর্ট নিয়েছে, সেটি দিয়ে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সমন্বয়ের সুযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার সেটি বিবেচনা করবে।
সরকার বিগত সময়ে ব্যবসায়ীদের বিভিন্নভাবে প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়ে তাঁদের ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখার জন্য যৌক্তিক উদ্যোগ নিয়েছে। এখন সময় এসেছে সাধারণ মানুষ, ভোক্তা, নিম্ন আয়ের মানুষকে বাঁচিয়ে ও টিকিয়ে রাখার। সুতরাং এই সময়ে সরকারের যে বাড়তি ব্যয় হবে, সেটি ভর্তুকিজনিত কারণে হোক, বর্ধিত মূল্য সমন্বয়ের কারণে হোক, সেগুলো সরকারের করা উচিত। এই ব্যয়ভারকে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত সাধারণ ভোক্তাদের বিবেচনায়। মনে রাখা দরকার, অন্যান্য গোষ্ঠীর হয়তো রাজনৈতিক শক্তি রয়েছে, ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক ভয়েস রয়েছে। হয়তো নিম্ন আয়ের মানুষের সে পরিমাণ রাজনৈতিক ভয়েস নেই এবং তারা দুর্বল থাকে। এটি যাতে কোনোভাবেই মূল্যবৃদ্ধির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। বরং সরকারের উচিত সাধারণ মানুষের এই দুর্বল অবস্থানটি যাতে কোনোভাবে ব্যবহৃত না হয়, সেই জায়গাটিতে সরকার যেন যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ মানুষের মূল্যস্ফীতির অভিঘাতটুকু যাতে নিম্ন পর্যায়ে থাকে, সে জন্য ব্যবস্থা নেয়।
লেখক : পরিচালক গবেষণা, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)