Published in শেয়ারবিজ on Saturday, 14 April 2018
৯ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা
রহমত রহমান
২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষ হতে আর মাত্র তিন মাস বাকি। এ তিন মাসে এনবিআরকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে। তিন মাসে এ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ অসম্ভব এবং অর্থবছর শেষে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হতে পারে বলে মনে করেন রাজস্ব সংশ্লিষ্টরা। এনবিআর বলছে অর্থবছরের শেষ সময়ে রাজস্ব আদায় বেশি হয়। এছাড়া রাজস্ব বাজেট সংশোধন হলে ঘাটতি হবে না।
চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এরমধ্যে নতুন ভ্যাট আইনকে সামনে রেখে ভ্যাট খাতে সর্বোচ্চ ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। নতুন আইন বাস্তবায়নে হলে এ খাতে অতিরিক্ত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা আহরণ সম্ভব হতো। কিন্তু আইন স্থগিত হওয়ায় ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মার্চ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ৬৭ হাজার ৩১৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার ৩১১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে আয়কর ও ভ্রমণ করে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ছয় হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে মূসকে ছয় হাজার ৯৪০ কোটি টাকা এবং আমদানি-রফতানি পর্যায়ে রাজস্ব তিন হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। অর্থবছরের ৯ মাসে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার সাত কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ছিল ১৭ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায় প্রবৃদ্ধি ৩৫ শতাংশ ধরা হয়। কিন্তু মার্চ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সাত শতাংশ কম।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, চলতি অর্থবছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা একটু বেশি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআর চেষ্টা করে যাচ্ছে। যে যে খাতে রাজস্ব আহরণের সম্ভাবনা বেশি সেদিকে আমরা নজর দিচ্ছি। ঘাটতির বিষয়ে তিনি বলেন, মার্চ পর্যন্ত প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষদিকে লক্ষ্যমাত্রা একটু বেশি থাকে। তবে আদায়ও বেশি হয়। এ অর্থবছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় দুই লাখ ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হতে পারে। আশা করি বাজেট সংশোধন হলে ঘাটতি থাকবে না।
অপরদিকে; গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিডিপি) বলছে, চলতি অর্থবছর প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা জানান। তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভ্যাট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ঘাটতি থাকবে। এ ভ্যাট ঘাটতি পূরণের জন্য প্রত্যক্ষ কর, এনবিআরবহির্ভূত রাজস্ব আদায়সহ করবহির্ভূত রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।
বাজেট ঘাটতি সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে বাজেট, সংশোধিত বাজেট ও প্রকৃত অর্জন এ তিন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাজেট ঘাটতির হিসাব করা হচ্ছে। প্রতি বছরেই সংশোধিত বাজেটে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা কমানো হচ্ছে। ফলে অর্থবছরের শেষে বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। তবে বাজেট সংশোধিত করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দেখানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, একই ধারায় এবারেও মূল বাজেটের লক্ষ্যমাত্রায় রাজস্ব ঘাটতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা। মূলত প্রাক্কলনের গুণগত মান না থাকায় এই ঘাটতি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে ঘাটতি থাকবে ৪৩ হাজার কোটি টাকা। তবে যেহারে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে সে হিসাবে ধরলে প্রবৃদ্ধি হবে ১৫ শতাংশ। এমনটি হলে ঘাটতি থাকবে ৫১ হাজার কোটি টাকা। জিডিপির সঙ্গে তুলনা করলে রাজস্ব ঘাটতি হবে ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ভ্যাটের ঘাটতি পূরণে ব্যক্তি খাতে কর আদায় বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে করযোগ্য এক তৃতীয়াংশ মানুষ কর দেয় না। রাজস্ব ঘাটতি দূর করতে এলাকাভিত্তিক, পেশাভিত্তিক আয়কর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। করের ভিত্তি প্রসারিত না হলে বর্তমান করদাতাদের অত্যাচার করা হবে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ায় ভ্যাট খাতে বেশি ঘাটতি হবে। তবে নতুন আইন নয় এনবিআর চেষ্টা করলে যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয় না তাদের ভ্যাটের আওতায় আনা, ভ্যাট ও শুল্ক ফাঁকি রোধ করলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। এ জন্য অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই।