Originally posted in দেশ রূপান্তর on 4 June 2023
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। দেশে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও ডলার সংকটের মধ্যেই নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছে সরকার। এ ছাড়া রয়েছে আইএমএফের ঋণের শর্তে অর্থনৈতিক সংস্কারের বাধ্যবাধকতা। নানা কারণেই এবারের বাজেট বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। প্রস্তাবিত এই বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী।
দেশ রূপান্তর: আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিনবারের শাসনামলের মধ্যে এবারই বাজেটের আলাদা গুরুত্ব কী?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এই বাজেটের গুরুত্ব অনেকগুলো। প্রথম কথা হলো যেহেতু তিন ধাপে এই সরকার প্রায় ১৫ বছর দেশ চালিয়েছে, তো এই দেড় দশকে তার অর্জনকে এই বাজেটের ভেতর দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। তো, সেই চেষ্টাটা হয়েছে। দ্বিতীয়ত হলো যেহেতু এইটা নির্বাচনের আগে সরকারের শেষ বাজেট সেহেতু নির্বাচনকে মাথায় রেখে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে বিবেচনায় নিয়ে সে কিছু কথা বলবে, কিছু পদক্ষেপ নেবে এটাও প্রত্যাশিত, স্বাভাবিক। আর এই বাজেটের গুরুত্বের জায়গা হলো আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি করার পরে সরকারের এটা প্রথম বাজেট। ফলে এক ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতির কাঠামোর ভেতরে সে বাজেট প্রস্তুত করেছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে। সেইটা হলো নতুনত্ব।
তো সর্বোপরি হলো দেশের ভেতরে এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই জটিল। যা আমরা সবাই জানি। মূল্যস্ফীতি মানুষকে বিপর্যস্ত করছে। দেশে যথেষ্ট পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় আমরা জ¦ালানি আমদানি করতে পারছি না। সেজন্য আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু থাকতে পারছে না। লোডশেডিং হচ্ছে ব্যাপকভাবে। আমাদের দেশের ব্যাংকব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর এবং সেখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ হওয়ার মতো অর্থ ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা পাচ্ছে না। দেশের বৈদেশিক লেনদেনের পরিস্থিতি খুবই চাপের মধ্যে থাকায় টাকায় মূল্যমান পড়ে যাচ্ছে… ইত্যাদি। তো অর্থনৈতিক এই পরিস্থিতি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভূ-কৌশলগত ব্যাপার। বিভিন্ন দেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক রেষারেষির প্রতিফলন এখন আমরা বাংলাদেশের মধ্যেও দেখতে পাই। অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এটাও বিবেচনায় নিতে হয়। এ ধরনের বেশ কিছু গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিত এবারের বাজেটে আমি দেখতে পাচ্ছি।
দেশ রূপান্তর: বাজেট প্রস্তাব পেশের আগে থেকেই আইএমএফের শর্তেও বিষয়গুলো আলোচনায় ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে সেসব শর্তের প্রতিফলন কেমন দেখছেন?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: সবচেয়ে বড় প্রতিফলন হলো হঠাৎ করে সরকার কর আহরণের জন্য জেগে উঠেছে। বাংলাদেশের কর জিডিপির অনুপাত তুলনীয় দেশের চাইতে অন্যতমভাবে কম। এটা আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি। কিন্তু এবার আমরা প্রথম লক্ষ করলাম সরকার কর আহরণের জন্য বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমন বেপরোয়া হয়েছে যে আপনার করযোগ্য আয় না থাকলেও তাদের ওপর ২০০০ টাকা করে কর আরোপের চিন্তা করেছে। এইটা একটা যেমন।
দ্বিতীয়ত, অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতার ভেতরে বেশ কিছু কথা আছে, যেটাতে দেখা যায় যে আইএমএফের সঙ্গে আমাদের যে সমস্ত শর্ত বা প্রতিশ্রুতি আছে তার প্রতিফলন রয়েছে। যেমন, টাকার মূল্যমানের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের সামঞ্জস্যকরণ, একীভূতকরণ। আমাদের ব্যাংকের যে নয়-ছয় সুদের হার বেঁধে দেওয়া আছে তাকে সুদের করিডরে নিয়ে আসা। নতুনভাবে মুদ্রানীতির চিন্তা করার প্রতিশ্রুতি। যেখানে আগে আমরা ঋণপ্রবাহের ওপর মনোযোগ দিতাম, এখন মূল্যস্ফীতির ওপর মনোযোগ দেব।
এছাড়া আমাদের দায়দেনা পরিস্থিতি সম্বন্ধে মূল্যায়ন, ব্যয় কাঠামোর খাত নিয়ে আমাদের যেখানে করের বিভিন্ন রেয়াত আছে সেগুলোকে কীভাবে সামঞ্জস্যকরণ করা যায় ইত্যাদি বহু বিষয় আছে যেটাকে আইএমএফের শর্তের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়।
দেশ রূপান্তর: রিটার্ন জমা দিলেই ২০০০ টাকা কর দিতে হবে। আবার সাড়ে ৩ লাখ টাকা করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে ন্যূনতম করমুক্ত আয়ের সীমা কোনটি?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এটা তো প্রত্যক্ষভাবেই বৈপরীত্য আর কি। আইন অনুযায়ী সাড়ে তিন লাখ টাকার যে করমুক্ত সীমা সেটাই কার্যকর হওয়ার কথা। আর ওনারা যেটা বলছেন, সেটা হলো যে সরকারের বেশ কিছু পরিষেবা যিনি পাবেন তার সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় আছে তা মনে করতে হবে। সেটাও ঠিক আছে।
কিন্তু… কেউ যদি পরিষেবা নাও নেয়, শুধু মাত্র এলাকাতে থাকবে এজন্যও সে বাধ্য হতে পারে রিটার্ন দিতে…
দেশ রূপান্তর: বিষয়টা তো খুবই বিস্তৃত। ব্যবসা বা যে কোনো অর্থনৈতিক কর্মকা- চালাতে এই ৪৪ সেবা যে কারোর লাগতে পারে। ট্রেড লাইসেন্স করা থেকে শুরু করে সঞ্চয়পত্র কেনা, ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত, জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচা, সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি পর্যন্ত। এছাড়া রয়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ, মোটরসাইকেলের নিবন্ধন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচা…।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ওই যে বললাম, কর আদায়ের জন্য সরকার হঠাৎ করে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এবং যেটা আইএমএফের কাছে জিডিপির আড়াই শতাংশ করে কর বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি সেটা পালনের চেষ্টা থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়। এই পদক্ষেপগুলোকে আরও বৈপরীত্যমূলক এজন্য যে, ধনী ও সম্পদশালীদের সম্পদের যে সারচার্জ থাকে সেখানে কিন্তু রেয়াত দেওয়া হয়েছে। তিন কোটি থেকে বাড়িয়ে চার কোটি করা হয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষের আয়ের ওপরে যেভাবে আমরা চাপ দিলাম, সেখানে আমরা সম্পদশালীদের সম্পদের ওপর থেকে আবার সেই চাপটা তুলে নিলাম।
দেশ রূপান্তর: একটার বেশি গাড়ি থাকলে যে দ্বিগুণ করের ব্যাপারটা…?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি এটার বিরুদ্ধে না।
দেশ রূপান্তর: যদি এমন হয় যে, পরিবারে স্বামী-স্ত্রীসহ ছেলেমেয়ে মিলিয়ে চারজন রয়েছে। তো একেকজনের নামে একটা করে গাড়ি থাকলেও তো চারটা গাড়ি…?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ওনারা বলতে পারবেন যে- পরিবার হিসেবে না যেহেতু আলাদা আলাদা হিসেবে ওনারা কর দেন সেহেতু ওনাদের আলাদা হিসেবে এটা বিবেচিত হবে। আমি তো তাই আন্দাজ করি। ব্যক্তিগত গাড়িতে আপনি যতই কর ধরেন না কেন বিষয়টা হলো অন্য জায়গায়, যদি দেশের ভেতরে গণপরিবহন সুলভ ও শোভন না হয় তাহলে তো মানুষ গাড়ি কিনেই চলার চেষ্টা করবে।
সেহেতু যেটা মনে রাখতে হবে, যখন আমরা প্রত্যেক সময়ে করের কথা বলি তখন একইসঙ্গে সরকারের ব্যয়ের গুণমান সম্পর্কেও আমাদের কথা বলতে হবে।
একটি বাড়তি করের টাকা দিলে প্রত্যেক করদাতা চিন্তা করে যে, এর বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে সে কী পেতে যাচ্ছে। তো বাজেট বক্তৃতায় সেই জায়গায় আমি কোনো গুরুত্ব দেখি না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, সামাজিক সুরক্ষা, নাগরিক নিরাপত্তা এ সমস্ত ক্ষেত্রে মানুষের যে অভিযোগ, অসন্তোষ আছে, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সেবা-পরিষেবার গুণমানকে ভালো করার মাধ্যমে কর আহরণের জন্য প্রণোদিত করা এমন কোনো কৌশল তো আমি লক্ষ করি না।
দেশ রূপান্তর: এখন তো বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা একটা বড় ইস্যু। তো আইএমএফের শর্তের কারণেই হোক বা যে কোনো কারণেই হোক কৃষকের ভর্তুকি কমানো কি ঠিক হয়েছে?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন পর্যন্ত শক্তির একটা জায়গা তো আমাদের শস্য উৎপাদন। এখানে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। লক্ষ রাখার বিষয় যে এই অর্থনৈতিক সংকটের সময় এই খাত যেন দুর্বল হয়ে না যায়।
তাই সরকারের পক্ষ থেকে যতই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভর্তুকি কমানোর কথা হোক না কেন সেচের বিদ্যুৎ, ডিজেল, উৎপাদনের জন্য সার, কীটনাশক, বীজ এসবের যেন কোনো টান না পড়ে এটা লক্ষ রাখা উচিত। বাজেটের ভেতরে এই কথাগুলো খুব স্পষ্টভাবে নেই, যে কৃষককে আমরা যেসব সমর্থন দিই সেটা তো কমাবই না বরং এই সময়ে সেগুলো বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।
আরেকটা বড় জায়গা যেটা আছে, সেটা হলো কৃষকের কাছ থেকে আমরা যে ধান-চাল, শস্য সংগ্রহ করি সেটার লক্ষ্যমাত্রা আমাদের কোনো সময়ই পূরণ হয় না। এখানে কৃষককে হয়রানি করা হয়, মধ্যস্বত্বভোগীরা থাকে, মিলাররা থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। তো বাজারকে সুসম বা আরও মসৃণ করা বা কার্যকর করার ক্ষেত্রেও আমরা কিন্তু কোনো ধরনের পদক্ষেপের কথা শুনি না।
দেশ রূপান্তর: জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির যে অঙ্ক অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবে পেশ করেছেন তা অর্জন কি সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: একটিও বাস্তবসম্মত না। প্রথম কথা হলো উনি জিডিপি সাড়ে ৭ শতাংশ বলেছেন, সেটা বাস্তবতার নিরিখে মেলে না। এবং এটা মেলাতে গিয়ে উনি ব্যক্তি বিনিয়োগের একটা অবাস্তব সংখ্যা দিয়েছেন। এটাও মেলে না। সবচেয়ে বড় কথা মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশে আনতে হলে এখন যে ৮ বা ৯ শতাংশ যে মূল্যস্ফীতি চলছে সেটার খুব দ্রুত তিন মাসের মধ্যে নিচে নেমে আসতে হবে। এটা তো বাস্তব না। সেহেতু উনি এই অর্থবছরের যে গড় মূল্যস্ফীতি বলেছেন- সেটা মোটেও বাস্তবসম্মত না।
আগামী বছরের প্রবৃদ্ধিও যে প্রাক্কলন করেছেন সেটাও অত্যন্ত উচ্চাশার। এটার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু সেই অবাস্তব ভিত্তিকে স্থাপন করার জন্য যে বিনিয়োগের সংখ্যা বলেছেন ব্যক্তি খাতের, ওইটা কেউ কল্পনার মধ্যেও আনতে পারবে না। আর ওই বিনিয়োগকে কার্যকর করার জন্য যে ধরনের ঋণ প্রবাহ থাকা দরকার, যে ধরনের আমদানি ইত্যাদি করতে হতে পারে সেটা সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের ব্যাংকগুলোর নেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও নেই।
দেশ রূপান্তর: বৈশ্বিক বাস্তবতা, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভসহ নানামুখী চাপের মধ্যে সরকারের ‘স্মার্ট বাজেট’ কতটুকু স্মার্টনেস দেখাতে পেরেছে?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি তো মনে করি যে স্মার্ট হওয়ার জন্য যে ন্যূনতম প্রসাধন দরকার পড়ে, ওনারা সেই প্রসাধনটাও ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেনি। আমার অত্যন্ত দুঃখ লাগে, পরিতাপ হয় যে সরকার গত ১৫ বছরে অনেক ভালো কাজ করেছে, সেই ভালো কাজগুলোর সম্মিলিত যে প্রশংসা যেটা পাওয়ার কথা ছিল এই বাজেটের মাধ্যমে, এই নির্বাচনের প্রাক্কালে সেটা সরকার নিতে পারল না।
দেশ রূপান্তর: নির্বাচনী বাজেটের যে প্রবণতা আমরা দেখে আসছি, সামনে তো নির্বাচন যার কথা আপনিও উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি, জনতুষ্টির বিষয় থাকে। তো আগের নির্বাচনী বাজেটের সফলতা বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের যে ফলাফল তার সাথে এবারের বাজেটের তুলনা কীভাবে করবেন?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এক কথায় বললে এইবারের বাজেট, নির্বাচনী বাজেট হয়নি। প্রথম কথা হলো আগের দুই নির্বাচনী বাজেট, ২০১৪ এবং ২০১৮ এর, তার ভালো-মন্দ বিচারে আমি যাচ্ছি না। ওই সময় অর্থনীতির যে শক্তি ছিল, প্রবৃদ্ধিও হারের যে গতি ছিল, বিনিয়োগ ছিল, মূল্যস্ফীতি নিচে ছিল, বৈদেশিক লেনদেনের যে শক্তি ছিল- সেগুলোর কিছুই এখন নেই। সেহেতু এই বছরের নির্বাচনের প্রাক্কালে আগের দুই নির্বাচনের আগের বাজেটের মতো আচরণ করার পরিস্থিতিও সরকারের ছিল না।
তা সত্ত্বেও যতটুকু ছিল, সেইটুকুও করার মতো সাহস বা উদ্যোগ আমরা দেখিনি। কারণ, যেহেতু বাজেট ঘাটতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে, জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের আশপাশে, সেহেতু টাকা ঋণ করে হলেও একটু চেষ্টা করতে পারত সরকার। দুঃখের বিষয় হলো টাকা ঋণ করে নেওয়ার জায়গাটাও সেই অর্থে সীমিত। আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতিতেও সরকার টাকা না ডলার কোনোটাই সে মেলাতে পারেনি। আর তারপরও যেটুকু যা আছে, সেটুকুও যে খুব ভালোমতো খরচ করতে পারবে সেই বিশ্বাসও বোধহয় সরকারের নেই। সেজন্য এটা কোনো নির্বাচনী বাজেট হয়নি।
নির্বাচনী বাজেট করার জন্য যে ধরনের জনতুষ্টিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যে মনকাড়া বিভিন্ন চিন্তা থাকে- বাজেটে সে ধরনের কোনো চিন্তাও নেই। কারণ হলো আমি সন্দেহ করি যে এই বাজেট কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দিয়ে তৈরি হয়নি। রাজনীতি অংশের মানুষরা যদি যুক্ত থাকতেন তাহলে আমি নিশ্চিত যে ওনারা সেই সমস্ত বিষয় ও চিন্তা এই বাজেটে সন্নিবেশিত করতেন। এটা আমার ধারণা।
দেশ রূপান্তর: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আপনাকে ও দেশ রূপান্তরকেও অনেক ধন্যবাদ।