Originally posted in ঢাকা টাইমস on 5 June 2024
চলতি বছরের বাজেট একটি ব্যতিক্রমী সময়ের মধ্যে হচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি চাপের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা না ফেরায় বিভিন্ন ধরনের চাপ রয়েছে। সব মিলিয়ে বাজেট প্রণীত হতে যাচ্ছে এমন একটি সময়ে যেখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে মূল উদ্দেশ্য। এখানে প্রবৃদ্ধির থেকেও মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
বাজেটের প্রকৃত আকারও গতবারের তুলনায় ছোট হবে বলে মনে হচ্ছে। এবারের বাজেট বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে হবে। তাই এটা জনবান্ধব কতটা হবে সেটি দেখার বিষয়। আমরা আশা করবো, যেসব খাত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত যেমন- সামাজিক সুরক্ষা খাত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত এগুলোতে যাতে যথেষ্ট বরাদ্দ থাকে। এসব খাতের বরাদ্দ যেন সংকোচন না হয় ববং আরো বাড়ানো হয় সেই চেষ্টা করতে হবে। তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার কিছুটা সীমাবদ্ধ এবং সীমিত রাখতে হবে। এসব বিষয় এবার মেনে নিতে হবে।
অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণের বোঝা বাড়ছেই। এদিকে যেহেতু ঋণের বোঝা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, সেহেতু এবারের বাজেটে ব্যয় সংকোচনের একটা চাপ থাকবে বলে মনে হচ্ছে। তবে এই ব্যয় সংকোচনে যেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সমস্যা সৃষ্টি না করে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ঋণের বোঝা থেকে উত্তরণের সবচেয়ে বড় উপায় হলো রাজস্ব-জিডিপির হার বাড়ানো। কারণ বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপির হার দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের চেয়ে অর্ধেক। যদি দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের সমান হতো তবে ঋণ নিতে হতো না। এখন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) পুরোটাই ঋণ নির্ভর হয়ে গেছে। তাই এদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
প্রথমত, নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় আহরণে অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য রাজস্ব আহরণ, রাজস্ব ব্যয় এবং উন্নয়ন ব্যয়Ñ এসব বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। রাজস্ব আহরণে অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় আহরণ করতে সক্ষম হবো। ফলে ঘাটতি বাজেট কিছুটা সীমিত রাখতে পারবো। তা না হলে ঘাটতি বাজেটে অর্থায়ন করতে হবে অভ্যন্তরীণ ঋণ দিয়ে কিংবা বিদেশি ঋণ দিয়ে। এর বাস্তবায়ন সম্ভব হলে আগামীতে ঋণ পরিশোধের যে চাপ সেটি অনেকাংশেই কমাতে পারবো।
দ্বিতীয়ত, বাস্তবায়ন সাশ্রয়ীভাবে এবং সুশাসনের সঙ্গে করতে হবে। এছাড়া সময়মতো প্রকল্প শেষ করতে হবে। কারণ এর কারণে ব্যয় বাড়ে। ফলে ঋণও বাড়ে। এসব বিষয় আমলে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনাগত দিকের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সম্পদ আরও কিভাবে বাড়াতে পারি সেদিকে নজর দিতে হবে।
আমরা দেখেছি যে, এক টাকা সাশ্রয় করতে পারাটা এক টাকা আয়ের সমান। তাই বাজেট বাস্তবায়নে খুব বেশি নজর দিতে হবে। বাজেটের আকার যদি ছোটও হয় সেটি যাতে প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে যেন বেশি সমস্যা তৈরি না হয়। তবে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেটি অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু তা পুনরুদ্ধারের জন্য চেষ্টা করতে হবে। তবে আমরা যদি বাস্তবায়নে সাশ্রয়ী এবং দক্ষ হতে পারি তাহলে ব্যয়গুলোকে কিছুটা হলেও সীমিত রাখতে পারবো।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে শুল্ক সেটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রেখে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারি। তবে রাজস্ব দিয়ে মূল্যস্ফীতি খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নয়। এর পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বিত কার্যক্রমে জোর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো ধরনের সমস্যা যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাজারের ওপর নিয়মিত নজরদারি বজায় রাখতে হবে।
তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি আমদানি কখন করতে হবে, কতটা মজুদ রাখতে হবে অর্থাৎ বাজার ব্যবস্থাপনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বাজেটের মাধ্যমে সেখানে কিছুটা অভিঘাত রাখতে পারবো। সেক্ষেত্রে নিত্যপণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কিছুটা ছাড় দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবো। এর পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে।
আগামী বাজেটে কর সংগ্রহের চেষ্টা থাকতে হবে। এর সঙ্গে সুশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। যারা এর ব্যত্যয় করবে তাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মানীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)