Originally posted in বাংলাদেশ প্রতিদিন on 2 June 2024
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক এবং কাঠামোগত সংস্কার-এ দুই খাতেই বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকিগুলো হলো-অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, দেশি-বিদেশি ঋণ, টাকার মূল্যহ্রাস, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি ও কম রাজস্ব আয়। অন্যদিকে কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি ব্যাংকিং খাত, বিদ্যুৎ খাত ও রাজস্ব খাতে সংস্কারকে বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন। ব্যাংকিং খাত সংস্কারে বাজেটে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকা দরকার বলেও ফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন এই অর্থনীতিবিদ ও জননীতি-বিশ্লেষক। দেবপ্রিয় বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির সঙ্গে সরকারের অন্য নীতিগুলোর সমন্বয় নিশ্চিত করা। এবারের বাজেটে এখন পর্যন্ত এ সমন্বয়ের বিষয়টি চোখে পড়েনি। দেবপ্রিয় বলেন, কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়ায় সরকারের ব্যয়ের সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। রাজস্ব বাড়াতে এনবিআরকে ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি কর আহরণেও বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে। আয়ের নতুন খাত চিহ্নিত করতে হবে। যাদের আয় বাড়ছে আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে তাদের কাছ থেকে যৌক্তিক কর আদায় করতে হবে। এজন্য রাজস্ব বোর্ডকে রাজনৈতিক সুরক্ষা দিতে হবে, যাতে প্রভাবশালীরা কর ফাঁকি না দিতে পারে। পাশাপাশি সৎ করদাতাদের করের টাকা দুর্নীতিমুক্ত খাতে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির অভাব এবং ব্যাংক একীভূতকরণের ব্যর্থতাও ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকি বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকের অনাদায়ী ঋণ একটি বড় সমস্যা। ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে। সুদের হারেও কোনো সামঞ্জস্য নেই। তিনি মনে করেন, ব্যাংকিং খাত সংস্কারে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি।
ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারির অভাবকে বড় কারণ হিসেবে তুলে ধরে সিপিডির এই সম্মাননীয় ফেলো বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাগজে-কলমে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করলেও এটি পরিচালনায় নেতৃত্বগত দুর্বলতা রয়ে গেছে। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির তথ্য-উপাত্ত প্রকাশেও দুর্বলতা চোখে পড়ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোর পাশাপাশি বাজেটে কাঠামোগত সংস্কারের এ চ্যালেঞ্জগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। অর্থনৈতিক খাতে স্থিতিশীলতার জন্য বিদ্যুৎ খাতের সংস্কারকে বাজেটের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতের বরাদ্দের একটি বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে শৃঙ্খলাহীনভাবে। প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেওয়া হয়েছে। এসব থেকে উৎপাদন আসছে ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। ব্যাপক পুঁজি বিনিয়োগ করেও সুফল মিলছে কম। বিদ্যুতে ভর্তুকি ব্যাপক। এটি সরকারের বাজেট-শৃঙ্খলায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। আমরা দেখছি, ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ খাতের ঋণের অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। কিস্তি দিতে না পারায় লোডশেডিং বেড়েছে। বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ বকেয়া রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এটি আসন্ন বাজেটে চাপ তৈরি করবে।