Originally posted in আমাদের সময় on 18 September 2023
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আপনার ভোটটাই আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি। এই ভোটকে প্রয়োগ করতে হবে। যারা আপনার পক্ষে কথা বলবে, কাজ করবে, অসম্প্রাদায়িকতা করবে তাদের জন্য ভোট প্রয়োগের সুযোগ রাখতে হবে। যদি ভোট দিতে পারেন তাহলে বুঝে নেবেন- ওই লোক আপনার পক্ষে কাজ করেছে কি করে নাই।
শনিবার ঢাকাশ্বেরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত যুব কর্মশালা ২০২৩-এ তিনি এসব কথা বলেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আপনাদের আবার বলছি, যদি শক্তির দৃশ্যমান প্রকাশ না হয় এবং নির্বাচনী প্রতিযোগিতা হলো সেই জায়গাটা, সেই জায়গায় প্রতিযোগিতা থাকলে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অনেক বেশি উপকৃত হয়। কেউ যদি মনে করেন, ভোট ছাড়া নির্বাচন দিয়ে আমি ধর্মীয় সংখ্যালঘুর পক্ষে লোক নিয়ে আসবো তারা আমার জন্য কাজ করবে… তারা কোনোদিন করবে না।
তিনি বলেন, ভারতবর্ষ তাদের সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করেছে, যেখানে কাশ্মীরকে বিশেষ সুবিধা দেয়া ছিল। এ সুবিধাটা হচ্ছে বাইরের মানুষ কাশ্মীরে কোনো জমি কিনতে পারবেন না। আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনিতো এটার বিরুদ্ধে। বললেন, হ্যাঁ এটাতো ঠিক হয়নি।
আমি বললাম- ধরেন বাংলাদেশের সংবিধানে আমরা একটা ৩৭০ নম্বর ধারা যোগ করলাম যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে অবাঙালিরা, মানে বাংলা ভাষাভাষীরা কোনো আদিবাসির জমি কিনতে পারবেন না। এইটা বন্ধ করতে হবে। তো উনি বললেন, না না এইটা কেমন করে হয়! এইটাতো একটা দেশ। একটা দেশের ভেতরে একটা জমি অন্যেরা কিনতে না পারলে কেমন করে হবে। আমি বললাম, তাহলে আপনি কাশ্মীরে এইটা চান, কিন্তু বাংলাদেশে এইটা করতে চাইলে তখন আপনি চান না। এইটা কেমন কথা?
তিনি আরও বলেন, আমাদের বুঝতে হবে- আমরা পৃথিবীতে যেই কথাগুলো অন্যের জন্য চাই, সেগুলো আমি নিজের দেশের মানুষের জন্য চাই না বা আমি বুঝিও না, এইটাতো হতে পারে না। এই জায়গাটাতে একটা বড়ভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ রয়েছে।
দেবপ্রিয় বলেন, ৬০ লাখ ছেলেমেয়ে শক্তি না কি শক্তি না ? কোনোদিন কি আমরা দেখেছি এই শক্তি কোন জায়গাতে? সে হলো সেই শক্তি যে শক্তি দৃশ্যমান। অদৃশ্য শক্তি কোনো শক্তি না। আপনার যদি সত্যি সম্প্রদায়ের কথা বলতে হয়, তাহলে স্বাধীনভাবে সামাজিক আন্দোলন, যে কথাটা বলে গেছেন সে সামাজিক আন্দোলনকে স্বাধীনভাবে আপনার করতে হবে। আপনারা কোনো সময় মনে করেন না যে, অন্য যেকোনো মানুষের ওপর অত্যাচার করলে হয়তো আমার অত্যাচারের কষ্টটা একটু কমেছে, এটা অন্যায় বুদ্ধি।
তিনি বলেন, সংবিধানের বিবর্তনের বিষয় যদি মনে নিয়ে যেতে চান, তাহলে আপনারা মনে রাখবেন সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী, সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী আর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী- এই তিনটি সংশোধনী যদি আপনারা মনে রাখেন তাহলেই কিন্তু যথেষ্ট, আপনার সংবিধানে কীভাবে ধর্মীয়করণ হয়েছে, সেটাকে আপনারা বুঝতে পারবেন।
সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো বলেন, এখন যেই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে- আমি ধর্মের ভিত্তিতে, জাতির ভিত্তিতে বৈষম্যের কথা বলবো, কিন্তু ওর ভিত্তিতে আমি আসলে প্রকারন্তরে রাজনৈতিক দলের কথা বলতে আসবো। এটা দিয়ে হবে না। রাজনৈতিক, নির্বাচনী বা নৈতিক বৈধতা ছাড়া যদি আমার কোনো ব্যক্তি বিশেষকে, আমার পছন্দের কোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় রাখি তাহলে বোধহয় সে এই কাজটিই করবে।