Published in প্রথম আলো on Thursday, 9 March 2017
রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আরও কমেছে
পণ্য রপ্তানিতে খরা কাটছে না। প্রবৃদ্ধি কমছেই। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাস (জুলাই-জানুয়ারি) শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। আট মাস পর সেটি কমে ৩ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ফলে অর্থবছর শেষ হওয়ার চার মাস আগেই রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। সেখানে গত আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আয় হয়েছে ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এখন লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে বাকি চার মাসে প্রতি মাসে গড়ে ৩৫৪ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় প্রয়োজন। তবে অর্থবছরের গত আট মাসে এই পরিমাণ রপ্তানি আয় হয়নি। গত জানুয়ারিতে সর্বোচ্চ ৩৩১ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছিল।
দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রাণভোমরা তৈরি পোশাক খাত। কারণ, মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি এই খাত থেকে আসে। তবে কয়েক মাস ধরে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির প্রবণতা কমে গেছে। সে জন্য সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানি আয়ে ফুটে উঠেছে বেহাল অবস্থা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) গতকাল বুধবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১ হাজার ৮৬৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে ৯০৭ কোটি ডলার আর ওভেন পোশাক থেকে ৯৫৬ কোটি ডলার এসেছে। গতবারের চেয়ে এবার পোশাক রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮২ শতাংশ। পোশাকের চেয়ে পরিমাণে অনেক পিছিয়ে থাকা পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে যথাক্রমে ১৫ ও ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাফরুহা সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পণ্য রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়াটা অবশ্যই দুশ্চিন্তার। মূলত পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা পোশাকশিল্প মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শিগগিরই পোশাক রপ্তানি আগের ধারায় ফিরে আসবে।’
অবশ্য পোশাকশিল্প মালিকেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিতে আমরা স্বাভাবিকভাবেই ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধরে থাকি। তবে কেবল ফেব্রুয়ারির হিসাব ধরলে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ কমে গেছে।’ তিনি বলেন, বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়া, প্রত্যাশা অনুযায়ী চীনের ব্যবসা না আসা, ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী, ডলারের বিপরীতে ইউরো দুর্বল এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ব্যর্থ হয়ে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। সব মিলিয়ে আগামী চার মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের তেমন একটা আশা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকাকে কিছুটা অবমূল্যায়িত করা হলে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। কৃত্রিমভাবে টাকাকে শক্তিশালী করে রাখা হয়েছে। সরকারের উচিত সেটি থেকে বেরিয়ে আসা। এ ছাড়া নীতি সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিতে হবে।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নিম্নপর্যায়েই যেভাবে ওঠানামা করেছে, তাতে চলতি অর্থবছরের তো বটেই, ভবিষ্যতের লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব হয়ে যাবে। সে জন্য রপ্তানি বাজারের সমস্যা নিরূপণে সরকারকে শিল্প-উদ্যোক্তা, বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
পণ্য রপ্তানিতে গত অর্থবছর ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ ডলার আয় হয়েছে। ২০২১ সালে রপ্তানি আয় ৬ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে চায় সরকার।