Originally posted in প্রথম আলো on 11 July 2021
নারায়ণগঞ্জে সেজান জুসের কারখানায় আগুনের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫২ শ্রমিক। এ ঘটনা আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে কারখানার কর্মপরিবেশকে। রানা প্লাজার পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে কাজ হয়েছে। কিন্তু পোশাকের বাইরের কারখানাগুলো থেকে গেছে তদারকির বাইরে। সেজানের এ ঘটনা ও তার প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন একজন অর্থনীতিবিদ ও একজন শ্রমবিশেষজ্ঞ।
নারায়ণগঞ্জে সেজান জুসের কারখানার এ ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে আবারও কারখানার কর্মপরিবেশের দুর্বলতার বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে। রানা প্লাজা ও তাজরীনের দুর্ঘটনার মাধ্যমে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। এত দিন পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ দিয়েই এ দেশের শিল্প খাতের কর্মপরিবেশের মান বোঝানো হতো। তাই রানা প্লাজা ও তাজরীনের দুর্ঘটনার পর কয়েক বছরে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। এসব কাজ বিদেশি ক্রেতাদের প্রশংসাও পেয়েছে। কিন্তু রূপগঞ্জের ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো, পোশাক কারখানার মানের মাধ্যমে শিল্প খাতের কর্মপরিবেশের মানদণ্ডের বিষয়টি ভুল ধারণা ছিল। এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা বুঝলাম, অন্য শিল্প খাতেও ত্রুটি আছে।
অন্য শিল্পকারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে আগে কখনো খুব একটা কাজ হয়নি। যেমন বিল্ডিং কোড, শ্রমিকের নিরাপত্তা ইস্যু ইত্যাদি বিষয়ে। পোশাক কারখানার বাইরে শিল্প খাতের কর্মপরিবেশ নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। কারণ, কর্মপরিবেশের বিষয়টি এখন শুধু পোশাক খাতেই আর সীমাবদ্ধ নেই, এর পরিধি অনেক বিস্তৃত। পোশাক ছাড়া অন্য শিল্প খাতগুলো এখন দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পণ্য সরবরাহ চেইনের মধ্যে চলে আসছে। সেজান জুসের প্রতিষ্ঠানটি দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশেও পণ্য রপ্তানি করত। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনে সেজান জুসের প্রতিষ্ঠানটি আছে।
রূপগঞ্জের এই প্রতিষ্ঠানটিতে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন তৈরি হয়নি। আবার ভবন তৈরির পর নকশা অনুযায়ী জায়গা ব্যবহার করা হয়নি। শ্রমিকেরা নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। অগ্নিকাণ্ডের সতর্কতা ব্যবস্থাও ছিল না। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে শিশুশ্রমের অভিযোগ আছে। সেজান জুসের কারখানার দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি দায় মালিকের। তিনি কারখানার কর্মপরিবেশের মানদণ্ড রক্ষা করেননি। এই প্রতিষ্ঠান বেশ সুপরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানটির এমন অব্যবস্থাপনা কেন পরিদর্শন কর্তৃপক্ষের চোখে পড়েনি, তা-ও প্রশ্নবিদ্ধ।
এ দেশে বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে আমাদের টনক নড়ে না। আশা করি, কর্তৃপক্ষের এবার টনক নড়বে। সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেবে। কী ধরনের সংস্কার করতে হবে, তা জানতে আমাদের সামনে তৈরি পোশাক খাতের মডেল তো হাতে আছেই।
এই মডেল এখন অন্য খাতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। প্লাস্টিক, কেমিক্যাল, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবা খাতের মতো কয়েকটি খাত চিহ্নিত করে শ্রমিকের নিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ শুরু করা যেতে পারে।
রূপগঞ্জের ঘটনাটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের জন্য একধরনের ভাবমূর্তির সংকট তৈরি করবে। রপ্তানিমুখী পোশাক খাত গত কয়েক বছরে যে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল, সেটিকে নতুন করে সংকটে ফেলবে। আবার পোশাক খাতের বাইরে বিভিন্ন খাতের রপ্তানি বাড়ছে। কিন্তু এই ঘটনার কারণে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিদেশি ক্রেতারা দ্বিধান্বিত হতে পারেন, তাঁরা পিছিয়ে যেতে পারেন।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি