Published in সমকাল on Monday, 1 January 2018
রফতানি খাত নিয়ে সংশয়
সমকাল প্রতিবেদক
নতুন বছরের রফতানি নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন বাণিজ্যবিশ্নেষক এবং রফতানিকারকদের কেউ কেউ। তাদের মতে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি থাকলে উৎপাদন বিঘ্নিত হতে পারে। তবে উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ বলছেন, যে কোনো পরিস্থতিতে রফতানি কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। ফলে নতুন বছরে রফতানি নিয়ে আশাবাদী তারা। ২০১৮ সালের রফতানি খাত কেমন যাবে- এ প্রশ্নের উত্তরে এমন মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, নির্বাচনের বছর হওয়ায় এ বছর আমদানি-রফতানি বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন হবে। সব পক্ষকে মনে রাখতে হবে, রাজনীতি যাতে কোনোভাবে অর্থনীতিকে আক্রান্ত না করে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সামনে যে খোলা জানালা তা কাজে লাগানোর সব প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে যে কোনো পরিস্থিতিতে। তিনি বলেন, প্রতিযোগী ভিয়েতনাম, ভারত ও কম্বোডিয়া বাংলাদেশের জন্য চ্যলেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে রফতানি কমছে। পণ্যে বৈচিত্র্যের সংকট প্রকট। এ পরিস্থিতিতে নিরাপদ এবং নির্বিঘ্ন সরবরাহ চেইন অক্ষুণ্ণ রাখতে বন্দরসহ সব অবকাঠামো এবং সেবায় বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় যাতে না বাড়ে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) রফতানি বেড়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ৬ শতাংশ। তৈরি পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধি ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। এ খাতে রফতানি বেড়েছে নামমাত্র শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের গত পাঁচ মাসেও হ্রাস-বৃদ্ধির প্রবণতার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে রফতানি খাত। গত পাঁচ মাসে প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের কিছু বেশি। টানা গত তিন বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চলতি অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে জানিয়ে আসছেন রফতানিকারকরা। তারা বলছেন, এ বছর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্রেতারা আগে থেকেই বেশ সতর্ক।
বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সমকালকে বলেন, বাজার পরিস্থিতি দেখে যা মনে হচ্ছে, তাতে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত রফতানি খারাপ যাবে না। অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ৬ কিংবা ৭ শতাংশের মতো দাঁড়াতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের মোটামুটি সমাধান করা হয়েছে। মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে কারখানায়। নতুন বছরের এপ্রিল নাগাদ আমদানি করা তরল গ্যাস সরবরাহ লাইনে দেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া গেলে অবকাঠামো সংকট মোটামুটি কেটে যাবে। এ ছাড়া পোশাক খাতের এখন বড় শক্তি হচ্ছে পরিচ্ছন্ন ইমেজ। সংস্কার এবং সবুজ প্রযুক্তির কারখানা এখন বাংলাদেশের বড় শক্তি। ক্রেতারা বলছেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশের মানের কারখানা এখন খুব কমই আছে। ক্রেতারা বিনিয়োগেও এখন আগ্রহী। নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে যে অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে তা পোশাক খাতকে খুব আক্রান্ত করবে বলে মনে হয় না। কারণ, মহাসড়ক, বন্দর সব প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থার সুযোগ পাবে পোশাক খাত।
আরও কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্রেতারা আরও ছয় মাস আগে রফতানি আদেশ নিয়ে আলোচনার টেবিলে দর কষাকষিতে নির্বাচনের বছর হিসেবে সহিংসতার বিষয়গুলো তুলছেন। এ বিষয়ে ক্রেতাদের সতর্কতার কথা তুলে ধরে উদ্যোক্তারা বলছেন, রফতানি আদেশে সে চিত্র দেখা যেতে পারে।