Published in যুগান্তর on Sunday, 8 October 2017
রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ ফ্রেমে ফ্রেমে
নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্যে পুড়ছে গ্রামের পর গ্রাম। এপারে বাংলাদেশ সীমান্তে সেই আগুনের লেলিহান শিখা নিষ্ফলক দৃষ্টিতে দেখছে হতভাগ্য রোহিঙ্গারা। প্রাণ বাঁচাতে তারা দলে দলে ছুটে আসছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা এক বাবার হাতে শেষ সম্বলটুকু একটি বস্তায় আর আরেক হাতে নিজের ছোট্ট সন্তান। এক শিশুর কাঁধে চড়ে আরেক শিশু কাদামাটির পথ পাড়ি দিয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর পরই এক রোহিঙ্গা অন্তঃসত্ত্বা নারী রাস্তার পাশে একটি ঝুপরি ঘরে জন্ম দিয়েছেন তার সন্তানের। খোলা আকাশের নিচে তার ছোট্ট শরীরে এখনও জড়ানো যায়নি একটু কাপড়। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ও নির্যাতিত রোহিঙ্গা মানুষগুলোর এমনি নানা দুর্দশার জীবন্ত প্রমান ৪১টি আলোকচিত্রে ধরা পড়েছে। আর সেগুলো নিয়েই শনিবার দিনব্যপী এক প্রদর্শনীর আয়োজন হয়ে গেল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চিত্রশালায়। ‘মিয়ানমার টু বাংলাদেশ’ শিরোনামের এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে মিডিয়া মিক্স কমিউনিকেশনস। শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এ প্রদর্শনী। এতে স্থান পাওয়া আলোকচিত্রগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের আলোচিত্র সাংবাদিক ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের কাছ থেকে যারা উখিয়াসহ নানা জায়গায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করেছেন। আলোকচিত্রীদের মধ্যে রয়েছেন দিপু মালাকার, কাজলা হাজরা, নাসিম সিকদার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোশারফ হোসেন, ইকবাল হোসাইন, এ আর সুমন, নাজমুস সাকিব, ড. আরিফ রেজা, ড. সাজীদ রেজওয়ান, ইমরান ইমু ও এসএম আল মাহমুদ প্রমুখ।
‘মহাত্মা গান্ধীকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করতে হবে’ : একটি মানবিক সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে মহাত্মা গান্ধীর মতবাদকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। শনিবার বিকালে মহাত্মা গান্ধীর ১৪৮তম জন্মদিন ও আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী।
সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মহাত্মা গান্ধীকে ‘যুগস্রষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান প্রেক্ষাপটে গান্ধীর অহিংস মতবাদকে নতুনভাবে বিশ্লেষণের কোনো বিকল্প নেই। সমাজের কোণে কোণে যখন দানবের জন্ম হচ্ছে, ঘটছে নানা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, তখন গান্ধীর মতবাদের বাস্তব প্রয়োগ বড় জরুরি।
শরণার্থী ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন যে নীতিতে এগোচ্ছে, তা সত্যি প্রশংসনীয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতও তাদের পাশে থাকবে।’
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘গান্ধীর দর্শনের একটি অনন্য পদ্ধতি ছিল, তা হল আত্মত্যাগের মাধ্যমে অন্যের অধিকার প্রতিষ্ঠা। আজকে যখন আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা বলি, তখন আমরা গান্ধীর বহুত্ববাদ মতবাদের কথা ভাবি।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার যে নীতি নিয়েছে তা গান্ধীর মতবাদের সঙ্গে ‘সঙ্গতিপূর্ণ।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সেক্রেটারি ঝর্ণা ধারা চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন ড. কাজী আনিস আহমেদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিয়া হক, ইনস্টিটিউট অব হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর পরিচালক ব্যারিস্টার রিজওয়ানা ইউসুফ। অনুষ্ঠানে এসেছিলেন লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ।