Dr Khonkader Golam Moazzem speaks about Bangladesh’s duty free access in US market in an interview published in Shokaler Khobor on Sunday, 16 November 2014
মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার : ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শুল্ক দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরেই বেশ বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে সকালের খবরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্কারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দৃশ্যত বাংলাদেশ আমেরিকাকে সরাসরি শুল্ক না দিলেও উত্পাদকদের মাধ্যমে সেটা নিচ্ছেন মার্কিন আমদানিকারকরা। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়ে তিনি আরও অনেক কথা বলেছেন। তার সাক্ষাত্কারের বিশেষ অংশ নিচে দেওয়া হল। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন সকালের খবরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এসএম আলমগীর।
সকালের খবর : সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা বলেছেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক তার দেশকে কোনো শুল্ক দেয় না। তার এ বক্তব্যের পর সরকার এবং উদ্যোক্তা পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। আপনি তৈরি পোশাকসহ আমদানি-রফতানি নিয়ে গবেষণামূলক অনেক কাজ করেন। এই বিতর্ক নিয়ে আপনার অভিমত কী? আমেরিকার সঙ্গে শুল্কের বিষয়টা আসলে কী?
খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : শুল্ক প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী একটি সার্বজনীন প্রক্রিয়া রয়েছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্যই প্রক্রিয়াটি প্রায় একই রকম। যেকোনো দেশের আমদানিকারক পণ্য আমদানি করলে তার শুল্ক আমদানিকারকই দিয়ে থাকে। কিন্তু শুল্কের কারণে পণ্যের ব্যয়ের ওপর যে চাপ পড়ে সে ব্যয়টি কে বহন করবেন সেটা নির্ভর করে পণ্য উত্পাদন চেইনে যারা জড়িত তারা কে কার ওপর ঠেলে দিতে পারছেন তার ওপর। অর্থাত্ যেকোনো পণ্যের শুল্ক যদি ১০ শতাংশ ধরি, এই শুল্কের কারণে পণ্যমূল্য নিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে সেটির প্রতিক্রিয়া হবে কি না সেটি নির্ভর করবে ওই পরিমাণে ট্যারিফ পণ্যের সঙ্গে যুক্ত করলে সেটি বিক্রয়যোগ্য হবে কি হবে না তার ওপর। সুতরাং এটিতে খুব সহজভাবে বলার সুযোগ নেই যে ট্যারিফটি একজন আমদানিকারক দিচ্ছেন, সেটি ভোক্তাই দিচ্ছেন-এমনটি সব সময় ঘটে না। বরং পণ্যের সংবেদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ভোক্তা কতটুকু দেবেন তার ওপর নির্ভর করে। একটি পণ্যের ট্যারিফ সমগ্র উত্পাদন চেইনের একটি অংশ। সুতরাং এটিকে আলাদাভাবে আমদানি পণ্যের অংশ হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ট্যারিফ বসানোর ফলে ভোক্তা যদি মনে করেন তিনি উচ্চমূল্যের পণ্য কিনবেন না, তাহলে তিনি সেখান থেকে সরে আসবেন। যদি ক্রেতা সরে যান তাহলে পণ্যটি আর সেখানে বিক্রি হবে না। যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে সে দেশের আমদানিকারকদের একরকম অনাগ্রহ দেখা দেবে। সে জন্য আমরা দেখছি বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক থাকার কারণে সে দেশে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি কমে আসছে। এর বিপরীতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শেয়ার বাড়ছে। তার একটি বড় কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। এর ফলে আমরা বলতে পারি শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকার কারণে বাংলাদেশি পণ্য ইউরোপীয় ভোক্তারা কম মূল্যে পাচ্ছেন বলে গ্রহণ করছেন। কিন্তু শুল্ক থাকার কারণে এবং পণ্যমূল্য বেশি হওয়ার কারণে মার্কিন ভোক্তারা বাংলাদেশি পণ্য বেশি গ্রহণ করছেন না। অবশ্য যে ট্যারিফটি একজন আমদানিকারক দিয়ে থাকেন, সেটি আসলে ভোক্তা পর্যায় থেকে সেভাবে নেওয়া হয় না। সেটা হয় ওই আমদানিকারক বহন করেন অথবা বিভিন্নভাবে সেটি উত্পাদকের কাছ থেকে নেওয়া হয়। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেওয়ার সময় মার্কিন আমদানিকারকরা শুল্কের বিষয়টি নিয়ে বেশ ভালোভবেই বিবেচনা করেন।
সকালের খবর : ড্যান মজিনা নিশ্চয় জানেন শুল্ক নেওয়ার বিষয়টি। তাহলে তিনি কেন এ ধরনের মন্তব্য করলেন?
খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : ড্যান মজিনা ও বাণিজ্যমন্ত্রী শুল্কের বিষয়টি নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে উভয়ের কথারই আংশিক যৌক্তিকতা রয়েছে, আবার আংশিক যৌক্তিকতা নেই। ড্যান মজিনার বক্তব্যের আংশিক যৌক্তিকতা হচ্ছে-এই ট্যারিফ বা শুল্ক আমেরিকা সরাসরি বাংলাদেশ থেকে নিচ্ছে না। এই শুল্ক নেওয়া হচ্ছে আমদানিকারক পর্যায়ে। কেননা আমদানিকারক বাংলাদেশ থেকে পণ্য নেওয়ার সময় শুল্কসহ সব কিছু মিটিয়েই নিয়ে যান। সেদিক থেকে বললে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের আংশিক যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু একটি জায়গায় তথ্যের কিছু ঘাটতি রয়েছে। সেটি হচ্ছে-তিনি বলেছেন, মার্কিন ভোক্তারাই বাড়তি মূল্যটি পুরোপুরি দেন। তার এই কথাটি ঠিক নয়।
এর বিপরীতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যেরও আংশিক যৌক্তিকতা রয়েছে। কারণ কার্যকর অর্থে এর দায় বাংলাদেশের ওপর পড়ছে। হয়তো প্রক্রিয়াগতভাবে এখান থেকে শুল্ক নেওয়া হচ্ছে না, কিন্তু দেশের উত্পাদক পর্যায় থেকে এটা ভিন্ন আঙ্গিকে নেওয়া হচ্ছে। সেই অর্থে বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের যৌক্তিকতা রয়েছে। আর দেশের উত্পাদকরা যদি দেখেন যে মার্কিন বাজারে তাদের পণ্য রফতানি করা প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে তারা বাড়তি শুল্ক মেনে নিয়েই রফতানি করবেন বা করছেন। অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমদানিকারক হয়তো নিজে অর্ধেক দিচ্ছেন আর উত্পাদক অর্ধেক দিচ্ছেন। এর ফলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম আর বাড়ছে না। তবে এই ট্যারিফের কারণে কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেটি দেখলে বোঝা যায় যে, এর কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেননা এই ট্যারিফের কারণে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের রফতানি কমে যাচ্ছে।
সকালের খবর : উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা। সে সুবিধা তো দেওয়া হচ্ছে না। এ বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?
খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম : উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মার্কিন বাজারে গার্মেন্ট পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা বিশ্বের অনেক দেশ পাচ্ছে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হওয়া সত্ত্বে বাংলাদেশ সে সুবিধা পাচ্ছে না। এই জায়গায় বাংলাদেশের একটা ন্যায্য দাবি রয়েছে। এই দাবিটা বাংলাদেশ জোরালোভাবে করতে পারে। মার্কিন বাজারে এই শুল্কমুক্ত সুবিধা আমাদের না থাকার কারণে সে দেশে রফতানি গ্রোথ বাড়ছে না। অথচ ইউরোপের বাজারে আমাদের পোশাক রফতানির গ্রোথ বাড়ছে। এই পার্থক্যের প্রধান কারণই হচ্ছে উচ্চ শুল্ক। মার্কিন বাজারে যদি এই সুবিধা বাংলাদেশকে দেওয়া হতো, তাহলে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের যে ৫-৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, সেটি তখন অনেক বেড়ে যেত। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ তখন চীনের অনেক কাছাকাছি চলে যেত। এই সুবিধা যদি বাংলাদেশকে দেওয়া হতো, তাহলে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে আরও কর্মসংস্থান হতো, দারিদ্র্য দূরা করা যেত এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অনেক উন্নতি ঘটানো যেত।