Originally posted in মানবজমিন on 25 November 2023
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একটি বড় ধরনের সমাবেশ করেছে। সমাবেশকে ভণ্ডুল করে দেয়া হয়েছে। মানুষ কিন্তু ভোট দিতে চাচ্ছে। একটা ভীতির সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। শেষ বিচারের বিচারটা হয়তো রাজনৈতিক হবে না হবে অর্থনৈতিক। একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার ততদিন টেকে যতদিন পর্যন্ত আপনার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে চ্যানেল আইতে সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের উপস্থাপনায় টকশো ‘তৃতীয় মাত্রা’য় যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, যখন মানুষ খুব কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে, তখন বুঝতে হবে সেই মানুষ সমস্যার মধ্যে জর্জরিত আছে। আমরা যখন উত্তরাধিকার রেখে যেতে চাই তখন বড় চিন্তার উত্তরাধিকার হয়। সেটা পদ্মা ব্রিজ, টানেল, ফ্লাইওভার দিয়ে রক্ষা করা যায় না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কিন্তু বড় চিন্তা করেছেন। এটাই নেতৃত্বের জায়গা। বঙ্গবন্ধুর সময় কি অর্থনৈতিক কষ্টে ছিলাম কি অন্য কষ্টে ছিলাম এসব কেউ মনে রাখবে না। মনে রাখবে মানুষটা জীবন দিয়ে গেছে আমাদের জন্য। আমাদের নেতৃবৃন্দের উচিত বড় চিন্তা করা। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ আবার শান্ত হবে, ঝড় থেমে যাবে। গোলায় ধান ভরে উঠবে।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আপনি যদি বিকাশমান গোষ্ঠী বিশেষ করে মধ্যবিত্তদের যদি আপনি খাওয়া পড়ার ব্যবস্থা করে রাখতে পারেন তাহলে তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কম চিন্তা করে। যখন দেখে তার আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরও খারাপ হচ্ছে তখন পরিবর্তনের জায়গা তৈরি হয়। যারা দেশ চালাচ্ছেন তারা রাজনীতিতে যতটা বিনিয়োগ করলেন তার থেকে বেশি দল ভাঙার ক্ষেত্রে নির্বাচনে আনার ক্ষেত্রে করলেন। এসব প্রণোদনা যদি আদা, পিয়াজ, ডিম, শাক লতাপাতার দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দিতেন তাহলে আরও বেশি রাজনৈতিক সুফল পেতো।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ছয় মাস আগে বলেছিলাম ত্রিমুখী সংকটে দেশ। এক. অর্থনৈতিক সংকট, দুই. রাজনৈতিক সংকট ও তৃতীয়ত বৈদেশিক সম্পর্কের সংকট। এই ৬ মাসে এই ৩ সংকটই আরও গভীর হয়েছে। আরও নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অথনৈতিক সংকটের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফিতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এটা সরকারি হিসেবে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু খাদ্যমূল্য সূচক বেড়েছে ১৪ শতাংশের মতো। এরসঙ্গে আমরা ভাবতাম গ্রামে মূল্যস্ফিতি এতটা নয়। কিন্তু এখন দেখছি এটা সত্য নয়। সরকারি হিসেবে বলছে, গ্রামে আরও একটু বেশি। মূল্যস্ফিতি কি কমবে? না কমবে না। আমার টাকার মূল্যের অবনমনের কারণে এটা হবে। সরকার বর্তমানে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি অপারগ বা সংযমী। সেহেতু রাজস্ব ব্যয় ও উন্নয়ন প্রথম ৪/৫ মাসে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এটার ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুধু বন্ধ হয়নি তা নয়, রাজস্ব ব্যয় পরিপালনের জন্য যেটা থাকে সরকারের নিজস্ব টাকায় করে সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। গ্রামাঞ্চলে নির্বাচনকে ঘিরেও যেসব কাজ হয়ে থাকে সেসবও হচ্ছে না। ধরেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলেন সেটা কমে যাচ্ছে। ঠিকাদারকে বলতে হচ্ছে অপেক্ষা করো। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিনিয়োগও কমে গেছে। এখন আমদানি করতে পারছেন না। এলসি খুলতে পারছেন না। এটার ফলে সরকারি যে সুবিধা সরকারের হচ্ছে, আমদানি কমার ফলে বৈদেশিক মুদ্রায় ভারসাম্য আনার সুযোগ হচ্ছে। নভেম্বরে সব থেকে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে রপ্তানিখাতে। আমদানি এক চতুর্থাংশ কমে গেছে। বাজারে গেলে দেখবেন প্রয়োজন অনুযায়ী আমদানি করা যাচ্ছে না। এমনকি ওষুধ আমদানির ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন ধরনের বৈদেশিক ব্যয় আরও বেড়ে গেছে। স্বল্প মেয়াদি ঋণ নেয়া বেড়েছে। যেটাকে আমরা ট্রেড ক্রেডিট বলি। যেগুলোর মূল্য অনেক বেশি। এরসঙ্গে বড় বড় প্রকল্পে ব্যয় পরিশোধের সময় চলে এসেছে। সাশ্রয়ী সময় যেটা ছিল ৩ বছর বা ৫ বছর যখন দিতে হয় না সেগুলো পার হয়ে গেছে। এই যে বঙ্গবন্ধু টানেল করলাম। নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। এটার জন্য যে ঋণ নিয়েছি এটা শুরু হবার আগেই টানেলের জন্য ঋণ পরিশোধের সময় এসে গেছে। রূপপুর যখন চালু হবে আর ২ বছর পর, তখন ৫০০ মিলিয়ন ডলার বছরে দিতে হবে। এখন ২/২.৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধজনিত ব্যয়। আগামী বছর এটা ৩ বিলিয়ন হবে, এটা আরও লম্বা হতে থাকবে। এটাকে মেটানোর মতো বৈদেশিক ক্ষমতা আমাদের নাই। যেটুকু ছিল সেটাও আমাদের বিভিন্ন গড়মিলের কারণে নাই। অর্থনীতি এখন কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। সরকার এই মুহূর্তে ৩ মাসের অর্থনীতি নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। নির্বাচনের আগে তারা যেটা করছে অর্থনীতিকে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। আদার দাম, পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ পাঠাচ্ছেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থা দিয়ে অর্থনীতি ব্যবস্থা ধরে রাখতে চাচ্ছেন। আবার বলছেন সিণ্ডিকেট আছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা দিয়ে সব ধরনের সমাধান করবো, এটা দিয়ে অর্থনীতি চলে না। আরও করা যায় না বিদেশি সম্পর্কের ক্ষেত্রে। এটাই আমি বলেছিলাম ৫/৬ মাস আগে। এখন অর্থনীতি কতোদিন সহ্য করতে পারবে এটা এখন দেখার বিষয়। আমরা কোনো একটা জায়গায় গিয়ে বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে যদি না পারি? আমাদের যে দেনা আছে তেল আনা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সেটা কীভাবে মোকাবিলা করবো সেটা নিয়ে চিন্তা আছে? এ ছাড়াও শ্রমের বাজারে নতুন করে আন্তর্জাতিকভাবে যে তিরস্কার পাচ্ছি সেটাতো আছেই।
তিনি বলেন, এই রকম পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ যা করার তা তারা করেছে। চুক্তি অনুযায়ী কতোগুলো শর্ত পূরণ করতে হবে তা তারা বলেছে। একটা বড় বিষয় প্রথমত রাজস্ব আদায় করতে পারি নাই। বৈদেশিক মজুত রক্ষা করতে পারি নাই। এ দুটো না পারার একটা বড় কারণ হলো- যে ধরনের টাকার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার কথা ছিল তা আমরা করি নাই। সরকার ভয় পেয়েছে এটার ফলে মূল্যস্ফিতি আরও বাড়বে। এর কারণে সুদের হার বাড়বে। সুদের হার বাড়লে যে ব্যবসায়িক গোষ্ঠী আছে তারা অখুশি হবে। একই রকমভাবে ব্যাংকিং খাতে যেহেতু কোনো সংস্কার করা হয়নি এটাও সঞ্চালন করার ক্ষেত্রে যে তারল্য সেটাও আনতে পারেনি। তাই বিশ্বব্যাংক বা আইএমএফ’র কাছে নতুন করে চাওয়ার কিছু নাই। প্রাপ্য যে কিস্তি নভেম্বরেরটা ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা আছে এসব প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় যে শেয়ার হোল্ডার আছে তারা যদি কোনো কারণে অন্যকোনো মনোভাব পোষণ করলে সেটার উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বড় মালিকের সঙ্গে একটা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। সেক্ষেত্রে তারা যদি তাদের প্রভাবিত প্রতিষ্ঠান দিয়ে কোনো শিক্ষা দিতে চায়। আপনিতো নিজেই বলেছেন তারা পদ্মা ব্রিজের টাকা আটকে দিয়েছিল। তারা যদি পদ্মা ব্রিজের টাকা আটকে দিতে পারে তাহলে অন্য টাকাওতো তারা আটকে দিতে পারে। যদিও আমি মনে করি না এই বয়ানটা পূর্ণভাবে সত্য। এই মুহূর্তে আপনি ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বাজেট সাপোর্ট নিয়েছেন। বাজেট সাপোর্ট কোনো প্রকল্পে যায় না। এটা কম সময়ের জন্য দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সিপিডি’র অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা এসেছিলেন তার ভিতরে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এসেছিলেন। তিনি ‘এ’ পেয়েছিলেন। আমরা যেখানে ‘ডি’ পেয়েছি। তিনি বলেছিলেন, ঋণ করে ঋণের টাকা শোধ করো না। ঋণ করে ঋণের টাকা শোধ করলে আরও বড় ঋণের জালে জড়িয়ে যাবে। আমরা ঋণ করে ঋণ করে শোধ করছি। আপনার জবাবদিহিতা যদি না থাকে আপনি এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে দায় সৃষ্টি করেন। আপনি দায় সৃষ্টি করছেন সন্তানের জন্য তার সন্তানের জন্য। যেটা করার আপনার অধিকার নাই। আপনার সাংবিধানিক অধিকার থাকলে মামলা করা যেতো। আপনি কীভাবে ঋণ করে ঘি খাচ্ছেন? এখানে কষ্ট হবে আপনার সন্তানের, আপনার না।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বাত্মক সম্পর্কের মধ্যদিয়ে গেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যে ধরনের বাক্য ব্যবহার করি এটা সম্পর্কের জন্য অনুকূল না। এটার জন্য যেকোনো কূটনৈতিকই অস্বস্তি বোধ করবে। সরকার প্রধান যখন এ ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন তখন কূটনৈতিক কাজ করাটাও ব্যাহত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে যে ধরনের দ্বন্দ্বের কথা লক্ষ্য করেছি সেটার একটা বড় জায়গা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার। দ্বিতীয়, বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি এবং কলুষিত আছে সে সমস্তের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য দেশকে ব্যবহার করা। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মনোভাব ও তৎপরতা। তৃতীয় জায়গা শ্রমের মান। সেটার সঙ্গেও মানবাধিকারের জায়গা যুক্ত আছে ইত্যাদি। যেকোনো ডেমোক্রেট সরকারের ধারাবাহিক ইতিহাস দেখেন সর্বদা শ্রমের বিষয়টি এক নম্বরে ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের যে বৈরিতার জায়গা দেখেন সেখানেও শ্রমের বিষয়টি বড় জায়গায় ছিল। আপনি যদি ফিরে দেখেন আমাদের রপ্তানিমূলক শিল্প প্রসারের কারণে তাদের দেশে মধ্য পর্যায়ে শিল্প উঠে যাচ্ছে সেটার ক্ষেত্রেও এই শ্রমের বাজারের বিষয়টি জড়িত। সস্তা শ্রমকে ব্যবহার করে এবং শ্রমের প্রতি যথেষ্ট মর্যাদাপূর্ণ আচরণ না করার বিষয়টি ছিল। আরেকটি বিষয় এখনো আসেনি সেটাও আসবে। এটা হলো পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়। পরিবেশ, নারীর অধিকার, শ্রমের অধিকার তার সঙ্গে মানবাধিকার চক্রাকারে ডেমোক্রেট সরকারের ভিতরে কাজ করে। এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। কারণ একটা নব্য দ্বিকেন্দ্রিক আদর্শিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেহেতু অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়াবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের ক্ষেত্রে আপনার মানবাধিকারের বিষয়টি। মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি এবং খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার। অনেকে অনেক কথা বলবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কি হয় না হয়, তাদের ইতিহাস। কিন্তু আমরা বর্তমান নিয়ে আলোচনা করছি। এটাই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। বাংলাদেশ যেহেতু বহু দিক থেকে একটি বিপন্ন সম্পর্কের মধ্যে আছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যে ফুটবল স্টেডিয়াম বানানো নিয়ে বলেন, ল্যাটিন আমেরিকায় খনিতে কাজ করা শ্রমিকরা আছে তাদের কথা বলেন বা আফ্রিকাতে অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজ করে তাদের কথা বলেন। এরসঙ্গে বাংলাদেশ অনেক বেশি মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। লক্ষ্যণীয় বিষয়, এটা আসবে রাজনৈতিক নাকি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া দিয়ে। এই মুহূর্তে যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে কংগ্রেস বা রিপ্রেজেন্টিটিভ দিয়ে আইন পাস করে কোনোকিছু নতুন হবে না। যদি হয় বিদ্যমান আইনের অধীনে আদেশ বলে হবে। এখন ডনাল্ড লু’দের সিদ্ধান্তের বিষয়টি এসেছে। এখন তারা আইনের অধীনে কাজটি করবে। এসব আইনের অধীনে দেখা যায়, ওনারা একটা টেস্ট কেস বের করেন। যেটা দিয়ে ওনারা ঝিকে মেরে বউকে শিক্ষা দিতে চান। শ্রম আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কিন্তু আত্মীয় পর্যায়ের না, তার নিচের পর্যায়ের। কিন্তু আঘাতটা তার উপর আসবে অন্যদেরকে বার্তা পৌঁছানোর জন্য। র্যাবের উপর যখন স্যাংশন এসেছিল তখনো আমরা এ রকম দেখেছিলাম। ওনারা অনেক সংকেত দেন। আমরা বলি এটা কিছু না। এখন বলছি এটাতো আমাদের না পৃথিবীকে বলেছে। আরে পৃথিবীর সবাই কী করে খায় এখানে। আসলে তো কল্পনা তো কল্পনা না। এই নামটা প্রতীকীভাবে এসেছে। আসলে নির্বাচন ৩ নম্বরে। ২ নম্বরে আছে ময়লা অর্থ, সম্পত্তি এটা আর প্রথম হচ্ছে শ্রমের বিষয়। শ্রমিকের অধিকার, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার কীভাবে রক্ষা করবেন যদি নাগরিক অধিকার না থাকে। স্যাংশনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসে কি আসে না? অনেক সময় বলা হয় ইরান, মিয়ানমার, রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা, বেলারুশতো চলছে। স্যাংশন হলো মার্কিন বিরোধী হিসেবে পরিচিত গুহার ভিতরে ঢুকে যাওয়া। মিয়ানমার যতক্ষণ চীন এবং রাশিয়া আছে ততক্ষণ অন্য দেশ নিয়ে চিন্তা করে না। বেলারুশের কাছে রাশিয়া থাকলে সে আর অন্যকিছু চিন্তা করে না। ইরান তার তেল সম্পদ ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে নিয়ে মোকাবিলা করছে। এইদেশগুলো যা পারে তা কি বাংলাদেশ পারবে? তার যে বাজার, রপ্তানি, রেমিট্যান্স, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ শিক্ষা এসব মিলে এটাতো তার কাছে একক কোনো গোষ্ঠীর কাছে গুহায় ঢুকে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের কোনো স্থায়ী যেসব ভিত্তি থাকে। তাদের স্বার্থও যুক্ত থাকে। এ সমস্ত জায়গায় উদ্ধারের সুযোগ আসে চীনের টাকা থেকে। চীন যদি বাংলাদেশকে আজ ৫ বিলিয়ন ডলার দেয় তার বৈদেশিক আর্থিক খাতকে ঠেকা দেয়ার জন্য। আর বাংলাদেশ সরকার যদি সেটা নেয়, ২/৩ বিলিয়ন এটা হবে বড় সংকেত।
এইযে বললাম গুহাতে ঢুকে যাবে কিনা? এই রকম সাহায্য শ্রীলঙ্কাকেও দেয়া হয়েছিল কিন্তু তা ঠেকানো যায়নি। কারণ সমস্যাটা কাঠামোগত। আপনার কিডনি ফাংশন করছে না যে কিডনিতে দেবেন। কারণ আপনার স্নায়ুওতো কাজ করছে না। কারণ আপনি অকার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিতর ঢুকে গেছেন। অর্থনীতির সমস্যা হলো এটা রাজনীতির সঙ্গে প্যাচ খেয়ে গেছে। রাজনীতি ঠিক না করলে অর্থনীতি ঠিক হবে না। আপনি যেনতেন একটা নির্বাচন করলেও অর্থনীতিকে ঠিক করতে পারবেন না। এইযে বেনামি টাকা নিয়ে গেল, বেনামিতে বিনিয়োগ করলো পুঁজিবাজারে, যারা ব্যাংকিং খাতকে ফোকলা করে দিলো। যারা ১০ টাকার প্রকল্পকে হাজার টাকা বানালো সেই লোকগুলোইতো আবার ফিরে আসে। সেইলোকগুলোই যদি ক্ষমতায় আসে জবাবদিহিতা না আসে তাহলে সমস্যাতো রয়েই গেল। একই সমস্যা বৈদেশিক ক্ষেত্রে।
চীনের অর্থের বিষয়ে বলেন, চীন থেকে আমরা বড় আমদানি করি। সে সেখানে আপনার টাকা মিটিয়ে দিতে পারে। এই টাকাটা পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে না। বাজেট সমর্থনে যে টাকা আসে এটা দ্রুত পরিশোধ করতে হয়। যার কারণে আইএমএফ’র সঙ্গে যে চুক্তি হবে সেটার লঙ্ঘন হবে।
ভারতের বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ভারতের জন্য বর্তমান সরকার যে বাঞ্চিত সরকার এটাতো আর গোপন বিষয় না। সেইরকম একটা সরকারের জন্য যে রকম একটা বৈধতা লাগে এই সরকারের তো সেই রকম বৈধতা নাই। সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ সরকার বেছে নেবে। ভারতের নির্বাচনে আমার পছন্দ যদি কংগ্রেস সরকার হয় কিন্তু মোদি সরকার যদি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয় আমরাতো মেনে নিচ্ছি। বাংলাদেশেও যদি একটা নির্বাচিত সরকার আসে তারাও নতুন সম্পর্ক মেনে নিতে পারে। এটাতো গণতান্ত্রিক মনোভাবের বিষয়। আপনার একটা আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে। চাপিয়ে দেয়ার মনোভাব থাকতে পারে না। মার্কিন সরকার কিন্তু বারবার বলছে আমরা কোনো দলের পক্ষে না। ভারত বললো, এটা গণতান্ত্রিক ব্যাপার কিন্তু তারা বললো না আমি কোনো দলের পক্ষে না। আমাদের দেশের সঙ্গে যে রকম সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এগুলো চলমান রাখার আকাঙ্ক্ষা তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ভিতরে যে সংখ্যালঘু, ভারতে সংখ্যালঘু আছে এই বিষয়গুলো তাদের মধ্যে আছে। তাদের ভেতর সম্পর্ক নষ্ট হলে শান্তি নষ্ট হবে। এই সমস্ত সম্পর্কগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীনের সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে দ্বিদলীয় সমঝোতায় যেতে হবে। যাতে সরকার পরিবর্তন হলে এই সম্পর্কগুলো নষ্ট না হয়। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নষ্ট নয় নাই।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। মোদি সরকার কী কম করছেন? না করছেন। আমরা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কুটচালে ওনারা ঠিকই আদায় করে নেয় কিন্তু আমরা পারি না। এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা। আমি এখন পর্যন্ত দেখছি না নির্বাচনের যে পথরেখাতে এগুচ্ছি, এটা দিয়ে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে। নির্বাচন হলেও হতে পারে কিন্তু তাতে আমি সমস্যার সমাধান দেখি না। মৌল রাজনৈতিক সমস্যা দুটা। আমাদের সাংবিধানিক বৈধতা হয়েছে কিন্তু রাজনৈতিক বৈধতা ছিল না। রাজনৈতিক বৈধতা না থাকায় নৈতিক বৈধতা হয়নি। একটা সরকারের সাংবিধানিক ও নৈতিক বৈধতা না থাকলে দেশের ভেতরেও না বাইরেও ভালো কিছু হয় না। এই সমস্যার উল্টো পিঠে আছে এত উন্নয়নের পর কেন বৈষম্য বেড়ে গেল। কেন আমি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। কেন আমি আমার প্রকল্পের টাকা আদায় করতে পারি না। ব্যাংকের যে ঋণ আছে সেটা আদায় করতে পারি না। আমার যে গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা দেবো সেটার জায়গাটা নেই। যেহেতু বৈধতা নাই সেহেতু জাবাবদিহিতা দাবি করতে পারি না। তখন আমার সমঝোতায় যেতে হয়। এটার জন্য পক্রিয়া দরকার, আন্তর্জাতিক সমর্থন দরকার, এটার জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার দরকার। এখকার ৭০ শতাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্মগ্রহণ করেছে। প্রতিদিন দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারি এতে দেশপ্রেম বাড়বে। কিন্তু কর্মস্পৃহা সৃষ্টি করতে অন্য রূপকল্প নিয়ে আসতে পারে। ২০৪১ সালের কথা বলবো, কিন্তু দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলবো না। কথা বলার ক্ষেত্রে অত্যাচার হবে। নির্বাচনের জন্য সাড়ে সাত লাখ মানুষকে বন্দুক হাতে নামাতে হবে, সবথেকে বড় উৎসব করার জন্য এটা কী সম্ভব।
রাজনৈতিক সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, বিরোধীদলকে আরেকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে না, লড়তে হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে। তাদের টিকে থাকার লড়াই করতে হচ্ছে। পুরো নেতৃত্বকে আপনি জেলে নিয়ে গেলেন কী করে? মির্জা ফখরুলকে আপনি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার জন্য গ্রেপ্তার করেন যুক্তির বাইরে। পিতাকে ধরতে না পারলে সন্তানকে ধরে নিয়ে যাবেন এটাতো হতে পারে না। গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছেন, আপনি বলছেন সে স্বীকার করেছে যে সে এসব করেছে। এটা কী আপনার করার অধিকার আছে। আপনি তাকে গায়ে হাত বুলিয়ে নাকি বাড়ি দিয়ে কী স্বীকার করিয়েছেন তা দিয়ে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সুযোগ নাই। অর্থাৎ আপনি একটা পরিবেশ সৃষ্টি করবেন যেখানে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বিবেচনার ন্যূনতম পরিবেশ নাই। নির্বাচনকে আপনি অর্থবহ করতে পারবেন না। নির্বাচন একটা দিনের বিষয় না অব্যাহত প্রক্রিয়ার ব্যাপার। আমি মনে করি ৮০ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে চায়। অধিকাংশ মানুষ মনে করে এই পরিস্থিতিতে সম্ভব না। এটা নিয়ে যদি ঐকমত্যের জায়গা তৈরি না হয় তাহলে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। ওই যে দুটো দলের নাম ধরে বলেছেন ১০-১৫ বছর পর দল থাকবে না। আমি বলি কোনো দলই থাকবে না। কারণ হলো আপনি থাইল্যান্ডের মতো হবেন। ইয়াং ছেলেটার দিকে দেখেন রাজনৈতিক দল করে জিতেও প্রধানমন্ত্রী হতে পারলো না। আপনি এমনভাবে স্বার্থগোষ্ঠী তৈরি করেছেন আপনি ভাঙতে চাইলেও ভাঙতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। মৌলিক সমাধানের জায়গাটা যত দেরি করবো তত মূল্য দিতে হবে। এই সংকীর্ণ মনোভাবে শুধুমাত্র নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করলে হবে না।