Originally posted in ভোরের কাগজ on 13 November 2023
মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের যে প্রত্যাশা ছিল, ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি তাদের সে প্রত্যাশার চেয়ে কম। সে হিসেবে তাদের দিক থেকে এখনো প্রত্যাশা রয়েছে- সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যদি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়; তাহলে চাহিদা পুরোপুরি পূরণ না হলেও কিছুটা হলেও আকাঙ্ক্ষা মিটবে। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই তারা হয়ত এ আন্দোলন করছেন। এই অংশটুকু আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে। কারণ তারা তাদের দাবি জানাতেই পারে। একই সঙ্গে কারখানা ভাঙচুরের বিষয়গুলোকে সমর্থন করার কোনো সুযোগ নেই। আবার নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ ঘটায়- সেটাও দুঃখজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। আমার কাছে মনে হয়, সৌহার্দপূর্ণভাবে সমাপ্তির সময় এসেছে। বিষয়টিকে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে না দেখে, উভয়পক্ষ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে; সেখান থেকে একটি সৌহার্দপূর্ণ সমাধানের দিকে যাওয়া প্রয়োজন।
যদিও এই মুহূর্তে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে দেশে। এর সঙ্গে এই সামাজিক অস্থিরতাও মিশে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে শ্রমিকদের যে দাবি দাওয়া তা তাদেরই অংশ। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা খুব জোরালোভাবে চোখে পড়েনি।
আমরা গবেষণা করে দেখেছি, বেশির ভাগ কারখানার বাড়তি মজুরি দেয়ার সক্ষমতা আছে। কারণ, গত কয়েক বছরে ছোট, মাঝারি ও বড় সব আকারের কারখানার রপ্তানি বেড়েছে। ব্র্যান্ড বা ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। কারখানার আকারও বড় হয়েছে। ফলে মালিকরা যে ধরনের জুজুর কথা বলেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। যেসব কারখানা বন্ধ হওয়ার যুক্তি দেয়া হয়, সেগুলো কোনো যুক্তিতেই টিকে থাকতে পারবে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বর্তমানে পোশাকের ক্রয়াদেশ তুলনামূলক কম। দেড় বছরের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। এতে করে কাঁচামাল ও গ্যাস-বিদ্যুতের দামও বেড়েছে। তবে পোশাক রপ্তানি করে প্রাপ্ত ডলারে আগের চেয়ে বেশি টাকা পাচ্ছেন মালিকরা।
তবে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পোশাক খাতে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে পূর্বের অর্ডারকৃত পণ্য পাঠাতে দেরি হয়ে যাবে। এজন্য বাড়তি চার্জ দিতেও হতে পারে। নতুন অর্ডার পেতেও সমস্যা হবে। তাই উভয়পক্ষকে নমনীয় হয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে যাওয়া সম্ভব।