Originally posted in Prothom Alo on 16 December 2021
বাংলাদেশের গত ৫০ বছরে বহুবিদ অর্জনকে একসঙ্গে দেখা যায় মানুষের গড় আয়ুর হিসেবে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। ৫০ বছরে তা দেড় গুণ বেড়েছে। অনেকের কাছে এটা বিশ্বাস হচ্ছে না যে সারা পৃথিবীর মানুষের গড় বয়সের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেশি। মানুষের বৈশ্বিক গড় আয়ু ৭২ বছর। বাংলাদেশে এখন তা ৭৩-এর কাছাকাছি। এ অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং আধুনিক জীবনযাত্রা একসঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে।
গত ৫০ বছরে কৃষিতেও বড় সাফল্য এসেছে। দেশ যখন স্বাধীন হয়, তখন একটা নেতিবাচক মনোভাব ছিল যে সাড়ে সাত কোটি মানুষ এক বেলা খেতে পারে না, এরা দেশ স্বাধীন করে কী করবে। সাড়ে ৭ কোটি মানুষ এখন ১৬ কোটি হয়েছে। এ সময়ে এক বেলা নয়, আমরা তিন বেলা খাওয়ার সামর্থ্য অর্জন করেছি। জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। একই সময়ে খাদ্য উৎপাদন তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ৫০ বছরে কৃষিতে সবুজ বিপ্লব হয়েছে। কৃষির আধুনিকায়ন হয়েছে। এটা অবশ্যই বড় অর্জন।
বিজয়ের ৫০ বছরে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য ও সেবা দিয়ে নিজেদের অবস্থান সংহত করেছে। আমরা তৈরি পোশাক উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। এ দেশের তৈরি শার্ট যখন বিশ্ববাজারে দেখা যায়, এটা অবশ্যই গৌরবের। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ও নারী শ্রমিক। আরেকটা বড় সাফল্য অনাবাসী শ্রমিকে। এই মুহূর্তে এক কোটি বাংলাদেশি মানুষ বিদেশে থাকে। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর অবস্থানও আমাদের বড় অর্জন।
তবে এ সাফল্যকে আরও সংহত করতে হলে আগামী দিনে দুটি জিনিস দূর করতে হবে। একটি হলো বৈষম্য। দেশে এখন বৈষম্য কাঠামোগত রূপ পেয়েছে। সমাজ ও অর্থনীতির ভেতরে বৈষম্য একটা অবশ্যম্ভাবী বিষয় হয়ে উঠেছে, যেটা হওয়ার কথা নয়। শুধু বৈষম্য নয়, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশেও বৈষম্য দেখা যাচ্ছে। এটা স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী। দ্বিতীয়ত সরকারি পরিষেবার গুণগত মান খুবই কম। এটা বাড়াতে হবে। প্রথমে ৫০ বছরের যে সাফল্যের কথা বলেছি, সে সুফল সবাই সমানভাবে পাচ্ছে না। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাফল্যে যেমন বুক ভরে ওঠে, তেমনি মনের ভেতরে অপরাধবোধও বড়ভাবে আসে। কারণ, এই গর্ব ও এই উচ্ছ্বাস সমানভাবে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারছি না।