Originally posted in ভোরের কাগজ on 3 July 2023
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, বড় বড় কোম্পানির মজুতদারি বা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক দুর্বলতা আছে। সম্প্রতি চিনি ও তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে বড় কোম্পানির সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সেখান থেকেই বোঝা যায় যে আসলে দুর্বলতা কোথায়। গতকাল মঙ্গলবার ভোরের কাগজকে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দামের অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের পেছনে বাজারের সাপ্লাই চেইন দায়ী। পণ্যের উৎপাদন থেকে শুরু করে অর্থাৎ কৃষক থেকে শহরের আড়তদার, ফড়িয়া, পাইকার, খুচরা পর্যায় হয়ে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছানোর পুরো নেটওয়ার্কটি কোনো সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে নেই। আবার বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন যে এসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সেটা বাজারে বড় বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। এটি আসলে প্রকারান্তরে বাজার ব্যবস্থায় সরকারের ভূমিকাকে খাটো করছে।
তিনি বলেন, বর্তমান বাজার কাঠামোর যে কোনো পর্যায়ে, যে কারো পক্ষে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেয়া, হস্তক্ষেপ করা এবং বাজারকে প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে। সেটা পণ্য মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি থেকে শুরু করে, হঠাৎ সব পণ্য ছেড়ে দিয়ে দাম কমিয়ে ফেলাও হতে পারে। কিন্তু এই বাজার কাঠামো যদি ফরমাল হতো তাহলে পুরো সাপ্লাই চেইনে যারা জড়িত তারা সবাই নিবন্ধিত হতেন, তাদের লেনদেন, মজুত, বিক্রির সব তথ্য লিপিবদ্ধ থাকত। তাহলে জানা যেত যে কে কোথায় মজুত রাখছেন, কি পরিমাণ মজুত রাখছেন, কি পরিমাণ বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে বাজারকে অস্থির করে তোলার প্রবণতা কমে আসত ।
তিনি আরো বলেন, বাজার ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অভাব, তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি, নামে বেনামে পণ্য মজুত এবং সরকারি নজরদারির অভাবের কারণে বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও দেখা যায় যে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সুযোগ নেয়া হচ্ছে এবং পণ্য আমদানির ফলে বাজারে দাম পড়ে যাচ্ছে। এই আমদানির কারণে অনেক সময় লোকসানের মুখেও পড়েন উৎপাদক বা সংগ্রহকারীরা। এ কারণে কৃষি পণ্যের বাজার কাঠামোকে একটি আইনসম্মত এবং প্রাতিষ্ঠানিক বা ফরমাল কাঠামোয় আনা প্রয়োজন।
তার কথায় – যেখানে পুরো সাপ্লাই চেইনে থাকা প্রত্যেকে নিবন্ধিত থাকবেন, তাদের লেনদেন ডিজিটাল পেমেন্ট বা ফরমাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হবে, সেইসঙ্গে পণ্য উৎপাদন, মজুত ও বিক্রির সব তথ্য জানার ব্যবস্থা থাকবে। তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যদি কিছুদিন নিয়মিত ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে ভবিষ্যতে বাজার প্রক্রিয়ায় একটি বার্তা যাবে যে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করলে শাস্তি পেতে হয়। ফলে বাজারকে নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা কমে আসবে। কিন্তু ব্যবস্থা না নেয়ায় এবং সরকারি মদতে এই ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছেন ভোক্তা, উৎপাদনকারী এবং অনেক সময় সংগ্রহকারীরা।