গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ইশতেহার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। জনগণকে সাথে নিয়ে এবং এলাকাভিত্তিক ভাবে ইশতেহার প্রণয়ন করলে তা বাস্তবায়ন সহজ হবে বলে মনে করেন খুলনা অঞ্চলের মানুষ। এই বক্তব্য উঠে আসে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর পক্ষ থেকে আয়োজিত জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা শীর্ষক আঞ্চলিক সংলাপে।
জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফাণ্ড (ইউএনডিইএফ) এবং সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, খুলনা-এর সহযোগিতায় সিপিডি সংলাপটি ২২ মার্চ ২০২২ খুলনায় আয়োজন করে।
নির্বাচনের প্রাক্বালে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারের মাধ্যমে তাদের উন্নয়নের অঙ্গীকার করে। ইশতেহারে বর্ণিত অঙ্গীকারসমূহ যে কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটিকে দল ও ভোটারদের মাঝে একটি লিখিত চুক্তি বলে ধরে নেওয়া যায়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” শিরোনামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ প্রকাশ করে। সংলাপে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
জনাব তালুকদার আব্দুল খালেক, মাননীয় মেয়র, খুলনা সিটি কর্পোরেশন সংলাপে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’-এ রূপান্তরিত করা। করোনার প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টির গুরুত্ব সবাই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। সবকিছু রাতারাতি হয় না, আস্তে আস্তে বাস্তবায়ন করতে হয়। সে চেষ্টাতেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
সংলাপের সম্মানিত অতিথি জনাব শেখ হারুনুর রশিদ, চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ খুলনা ও সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, খুলনা জেলা কমিটি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরে বলেন- অতীত থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে এক থাকতে হবে। নারী উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, নারী উন্নয়নে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজ সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে গেছে এবং এসব উন্নয়নের কথা সবাইকে স্বীকার করতে হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট, ডি হাঙ্গার প্রোজেক্ট বাংলাদেশ সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, ইশতেহার বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়বদ্ধ করতে হবে। এজন্য ইশতেহার সম্পর্কে জনগণকেও সচেতন হতে হবে।
সিপিডি’র সংলাপ ও যোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জনাব অভ্র ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। উপস্থাপনায় তিনি বিভিন্ন সুচকে খুলনা অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা বিষয়ে বিভিন্ন অঙ্গীকার এবং অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এই সংলাপের আগে বাংলাদেশের ৯০ টি স্থানে মুক্ত আলোচনা করা হয়, যেখানে প্রায় ৯১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থাপনায় খুলনা অঞ্চলের মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহার সম্পর্কে মতামত এবং পরামর্শও তুলে ধরা হয়।
মিজ সুতপা বেদজ্ঞ, লেখক, গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে চর্চা বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইশতেহার নিয়ে আলোচনা করার সংস্কৃতি থাকলে জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি হবে।
এ্যাডভোকেট পারভীন আহমেদ, সভাপতি, বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক, বাগেরহাট বলেন রাজনীতির বাইরে আমার কেউ নই। সেজন্য আমাদের সব দলের ইশতেহার সম্পর্কে জানা উচিত।
অধ্যাপক জাফর ইমাম, সভাপতি, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, খুলনা জেলা কমিটি সংলাপে সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, জেন্ডার সমতা ছাড়া একটি রাষ্ট্র এগিয়ে যেতে পারে না।
মুক্ত আলোচনায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান জনাব সাইদ মেহেদী বলেন, উপকুলীয় অঞ্চলে শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নদী-নালা-খাল-বিল দখলমুক্ত করার কথা ইশতেহারে সংযুক্ত করা উচিত। বাগেরহাট জেলার জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শাহিদা আকতার বলেন, তৃণমূলের নারীদের মূল দলে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, ইশতেহার গুলো কেন্দ্র নির্ভর সেখানে তৃণমূল মানুষদের সম্পৃক্ততা থাকছে না। বাসদ খুলনা জেলা কমটির আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত নান্টু দেশের প্রায় সব কর্মক্ষেত্রে নুন্যতম মজুরি ঘোষণা না থাকার কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাঠামো দূর্বল হয়ে পড়েছে তাই কোচিং নির্ভরতা বাড়ছে। নারী উদ্যোক্তা আলমাস আরা ঋণ পাবার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ঋণ পাচ্ছে না।
সংলাপে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি।