সরকার আন্তরিক না হলে ইশতেহারে উল্লেখিত অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রাজশাহী অঞ্চলের যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও সেখানে জনসম্পৃক্ততার অভাব রয়েছে। এ বক্তব্য উঠে এসেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর পক্ষ থেকে আয়োজিত জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা শীর্ষক আঞ্চলিক সংলাপে।
সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, রাজশাহী এবং জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফাণ্ড (ইউএনডিইএফ)-এর সহযোগীতায় সিপিডি সংলাপটি ১২ মার্চ ২০২২ রাজশাহীতে আয়োজন করে।
নির্বাচনের প্রাক্বালে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারের মাধ্যমে তাদের উন্নয়নের অঙ্গীকার করে। ইশতেহারে বর্ণিত অঙ্গীকারসমূহ যে কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটিকে দল ও ভোটারদের মাঝে একটি লিখিত চুক্তি বলে ধরে নেওয়া যায়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে “সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ” শিরোনামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ প্রকাশ করে। সংলাপে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার সমূহ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি সংলাপের সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, জবাবদিহিমূলক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য আমাদের সবার কথা শোনার সংস্কৃতি ধরে রাখতে হবে এবং একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট, ডি হাঙ্গার প্রোজেক্ট বাংলাদেশ সংলাপে সূচনা বক্তব্য প্রদানের সময় নির্বাচনী ইশতেহারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়বদ্ধ করতে হবে এবং নাগরিকদের আরো সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে।
সিপিডি’র সংলাপ ও যোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জনাব অভ্র ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। উপস্থাপনায় তিনি বিভিন্ন সুচকে রাজশাহী অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরেন। এছাড়াও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা বিষয়ে বিভিন্ন অঙ্গীকার এবং অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এই সংলাপের আগে বাংলাদেশের ৯০ টি স্থানে মুক্ত আলোচনা করা হয়, যেখানে প্রায় ৯১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থাপনায় রাজশাহী অঞ্চলের মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহার সম্পর্কে মতামত এবং পরামর্শও তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজশাহী জেলা কমিটির নির্বাহী সদস্য জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম বাদশা তার নিজস্ব বক্তব্যে তুলে ধরে বলেন রাজশাহী অঞ্চলের পর্যটন ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলতে হবে এবং চলনবিলকে রক্ষা করতে হবে। তিনি শিক্ষিত যুবকদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরির ওপরে জোড় দেন। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন আমাদের এ বিষয়ে এখনই সতর্ক হতে হবে।
মিজ জাহান পান্না, সাবেক সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সংলাপে সম্মানীত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট পিছিয়ে আছি এবং নারীদেরকে আরো সোচ্চার হতে হবে।
জনাব মোহাম্মদ পিয়ার বক্স, সভাপতি, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক, রাজশাহী মহানগর সংলাপে আলোচক হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, সরকার আন্তরিক না হলে ইশতেহারের অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রাজশাহী অঞ্চলের যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও সেখানে জনসম্পৃক্ততার অভাব রয়েছে।
ড. রকীব আহমেদ, সাবেক অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তার বক্তব্যে বলেন বেসরকারি পর্যায়ে চাকরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা চাকরি পাচ্ছে না। রাজশাহীতে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও অন্যান্য অঞ্চলের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে।
মিজ সামিনা বেগম, সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), রাজশাহী ইউনিট বলেন, ইশতেহার প্রণয়নের পূর্বে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন আছে এবং নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই স্থানীয় চাহিদার তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরকার তাদের ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারল তা প্রকাশ করা উচিত। তিনি আরো বলেন নারীরা নিজেদের গৃহেই নির্যাতনের শিকার হয় সুতরাং নারীদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে হলে এই নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। তিনি ‘তথ্য অধিকার আইন’ ব্যবহারের উপরে গুরুত্ব দেন।
সংলাপে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি।