Professor Mustafizur Rahman on transparency in large-scale projects

Published in Amader Orthonete on Wednesday, 18 March 2015.

বাংলাদেশের বড় প্রকল্পগুলোয় চীন-ভারত প্রতিযোগিতা

হাসান আরিফ

বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নের বড় প্রকল্পগুলো পেতে আঞ্চলিক দুই পরাশক্তি ভারত ও চীন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বর্তমানে দেশে বেশকিছু বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। আগামী কয়েক বছরে আরো কিছু বড় প্রকল্প নেয়া হবে। গভীর সমুদ্রবন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, কর্ণফুলী নদীতে টানেল ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছে বেশকিছু রেলপথ নির্মাণ, ইঞ্জিন-কোচ ও বাস-ট্রাক ক্রয়ের উদ্যোগ।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-চীনের প্রতিযোগিতায় এরই মধ্যে ভারতের পক্ষ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বিস্তারকে ত্বরান্বিত করতেই দেশটি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে গভীর করতে চাইছে বলে মনে করছেন তারা। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিজস্ব স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হলে যে দেশই কাজ পাবে, তার গুণগত মান ভালো হবে।

চলমান বড় অবকাঠামো প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতুর বড় দুই অংশের কাজ এককভাবে করছে চীন। দেশটির চায়না মেজর ব্রিজ মূল সেতু ও সিনোহাইড্রো করপোরেশন নদী শাসনের কাজ করছে। আবার কর্ণফুলীর নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণেও আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এরই মধ্যে টানেলটি নির্মাণ ও অর্থায়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও সমঝোতা স্মারক সই করেছে চীন।

এদিকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ নিতে চাইছে দরপত্রে ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের (ভেল) অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় এনটিপিসি। এজন্য ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দরপত্র শিথিলের প্রস্তাব করেছে দেশটি। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের দরপত্রেও অংশগ্রহণ করেছে ভারত। দরপত্র মূল্যায়নে নির্বাচিত হলে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে বছরে ৫০ লাখ টন এলএনজি আমদানি, টার্মিনাল নির্মাণ ও তা পরিচালনায় দায়িত্ব পাবে। জ্বালানি খাত ছাড়াও সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও আগ্রহ দেখিয়েছে ভারতের আদানি গ্র“প। প্রস্তাবিত বন্দরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং কয়লা খালাস ও সংরক্ষণে একটি পৃথক জেটি নির্মাণেও আগ্রহী এ শিল্প গ্র“পটি। এজন্য গত বছর জুলাইয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে দেখা করেন আদানি গ্র“পের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। যদিও এর আগে কখনই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ভারত আগ্রহ দেখায়নি।

এদিকে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বরাবরই আগ্রহ দেখিয়ে আসছে চীন। ২০১৩ সালে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবও দেয় দেশটি। তবে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সরকার এককভাবে কোনো দেশকে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ভারত আগ্রহ দেখায়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নেও এখন চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে এসেছে ভারত। চীনের বায়ার্স ক্রেডিটের বিপরীতে ১০০ কোটি ডলার লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) হিসেবে দিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে ৮০ কোটি ডলার অবকাঠামো ঋণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আর ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতু নির্মাণে অনুদান হিসেবে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েও ভারত-চীনের মধ্যে বড় ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। টঙ্গী-ভৈরববাজার ও লাকসাম-চিনকি আস্তানা ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ করছে চীন। ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালারচর রেলপথও নির্মাণ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম ডুয়াল গেজ ডাবল লাইনসহ হাইস্পিড ট্রেন, দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম ডুয়াল গেজ রেলপথ ও ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। তবে ডলার ক্রেডিট লাইনের (এলওসি) আওতায় দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস রেলসেতু নির্মাণ করছে ভারত। এছাড়া খুলনা-মংলা রেলপথ ও ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন নির্মাণ করতে যাচ্ছে ভারত। গত কয়েক বছরে রেলওয়ের ইঞ্জিন-কোচ সরবরাহেও ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে। এরই মধ্যে দুই ধাপে ২৬টি ব্রড গেজ ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে দেশটি। আর ১২০টি ব্রড গেজ কোচ সরবরাহে চুক্তি হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এছাড়া ১৬৫টি ব্রড গেজ ও ৮১টি মিটার গেজ তেলবাহী ট্যাংকার ও ২২০টি পণ্যবাহী ওয়াগন এলওসির আওতায় সরবরাহ করেছে ভারত। তবে ২০ সেট ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডেমু) ২০১৩ সালে সরবরাহ করে চীন। এছাড়া সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে ২০০ কোচ সরবরাহেও আগ্রহী দেশটি। এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস সরবরাহ নিয়েও দুই দেশের প্রতিযোগিতা রয়েছে। ২০১১ সালে বিআরটিসিকে ২৭৫টি বাস সরবরাহ করে চীন। কিন্তু পরে বিআরটিসির বাজার দখল করে নেয় ভারত। এলওসির আওতায় ২৯০টি দ্বিতল, ৮৮টি এসি একতলা ও ৫০টি আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) বাস সরবরাহ করে দেশটি। তবে বসে নেই চীনও। বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আবার ২০০ দ্বিতল ও ১০০ আর্টিকুলেটেড বাস এবং ৫০০ ট্রাক সরবরাহ করতে চাচ্ছে দেশটি।

সম্পাদনা : ইমরুল শাহেদ